যুদ্ধ করলেন কে আর মুক্তিযোদ্ধা হলেন কে!
ঝালকাঠি সদর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে মো. সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ মুক্তিযোদ্ধার ভাতাসহ যাবতীয় রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন।
অথচ পার্শ্ববর্তী পিপলিতা গ্রামের মৃত সৈয়দদ্দিনের ছেলে সুলতান হোসেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কিংবা কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাননি।
নাম এবং বাবার নামে মিল থাকায় সুলতান হোসেন মাঝির কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে ভাতা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে সুলতান আহমেদ দুয়ারী নিজেকে সুলতান হোসেন দুয়ারী পরিচয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় পাইয়ে দিয়েছেন চাকরিও!
সেই সুলতান হোসেন দুয়ারীসহ ৫ মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল হওয়ায় আর্থিকসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নোটিশ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখার উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৪৮তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৈয়দ আলী দুয়ারীর ছেলে সুলতান হোসেন দুয়ারীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়েছে।
উপসচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত গত ২২ নভেম্বরে স্বাক্ষরিত চিঠিটি ১ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে পৌঁছালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবেকুন নাহার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিল হওয়া অন্যরা হলেন- সদর উপজেলার সোনামদ্দি হাওলাদারের ছেলে মো. আবদুর রব হাওলাদার, তাছেন উদ্দিন তালুকদারের ছেলে মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন, নলছিটি উপজেলার মো. দলিল উদ্দিন মৃধার ছেলে মো. সুলতান আহম্মেদ মৃধা ও কাঁঠালিয়া উপজেলার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে আবুল বাশার।
জামুকার ৫৭তম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মো. আবদুর রব হাওলাদার, ৬৬তম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবুল বাশার, ৬১তম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মো. সুলতান আহম্মেদ মৃধা ও ৬৫ তম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোহাম্মদ আলতাফ হোসেনের গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার খতিয়ান নং-১৬৬, সংগ্রামনীল মৌজার জেএল নং ১১০ সম্পত্তির মাঠ পর্চায় এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে (নং-৪২০৩১১১৮৫০৬০) তার নাম রয়েছে সুলতান আহম্মেদ দুয়ারী, পিতা:- মৃত সৈয়দ আলী দুয়ারী, সাং-নেহালপুর (দুয়ারীবাড়ি)। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রে তার নাম রয়েছে সুলতান হোসেন, গ্রাম:- পিপলিতা, পোস্ট:- বাসন্ডা, ঝালকাঠি।
১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতিকে স্বাধীন করতে স্বাধীকার আন্দোলনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন সুলতান হোসেন।
তিনি বলেন, কখনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাব সে আশায় বা লোভে নয় তখন শুধুমাত্র ঝাঁপিয়ে পড়ি দেশ মাতৃকার টানে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানি (মোঃ আতাউল গনি ওসমানী) স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদান করা হয় সুলতান হোসেনকে।
পার্শ্ববর্তী নেহালপুর গ্রামের মো. সুলতান আহাম্মেদ দুয়ারী তার কাছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ কেমন তা দেখতে আসেন। এ সময় তিনি বলেন তোমারতো লোকজন নেই, আমার মন্ত্রণালয়ে নিজস্ব লোক আছে। আমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তোমার সনদের ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেব। এ আশ্বাসে প্রতিবেশী হিসেবে তাকে দেখালে তিনি আমার মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র নিয়ে যান।
সেই অনুযায়ী সনদপত্রে প্রতারণা করে নাম ও পিতার নাম জালিয়াতির মাধ্যমে কৌশলে পরিবর্তন করে নিজেকে গেজেটভুক্ত করেন। যার মুক্তিবার্তা নং-০৬০২০১০৬২৮। বিষয়টি জানতে পেরে সুলতান দুয়ারীর কাছে চাইতে গেলে তিনি আমাকে হত্যাসহ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
অভিযুক্ত সুলতান আহম্মেদ দুয়ারীর চাচা আকরাম আলী দুয়ারী (৯১) জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা বাড়িতেই ছিলাম। সুলতান আহম্মেদ আমার বড় ভাইয়ের ছেলে। তখন ওর বয়স ১৭/১৮ বছর। সেসময় বাড়িতেই ছিল সে। কখনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি।
নেহালপুরের প্রবীণ ব্যক্তি হাবিবুর রহমান তালুকদার ও সুলতান দুয়ারীর চাচাতো ভাই আলতাফ হোসেন, মো. আমির হোসেনসহ এলাকাবাসী জানান, সুলতান দুয়ারী কখনোই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। পিপলিতা গ্রামের সুলতান হোসেন মাঝীর সার্টিফিকেট ব্যবহার করে পিতার নাম ভুল হয়েছে বলে পরিবর্তন করে এখন নতুন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তিনি। তিনি জালজালিয়াতিতে অনেক দক্ষ। এলাকার বিভিন্ন নিরীহ মানুষের জমি জাল স্বাক্ষর করে দলিল তৈরি করে দখল করেছেন। এর প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।
আতিকুর রহমান/এফএ/জেআইএম