বন্ধ রাখার নির্দেশ মানতে নারাজ নওগাঁর ক্লিনিকগুলো
লাইসেন্স, চিকিৎসার পরিবেশ ও মেডিকেল ডিপ্লোমা নার্স না থাকায় নওগাঁয় বেসরকারি চারটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানাসহ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়। কিন্তু সিভিল সার্জন অফিসের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম ঠিকই পরিচালনা করে যাচ্ছে।
সিভিল সার্জন অফিসের কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ক্লিনিকগুলো পরিচালনা করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ উঠেছে।
১১ নভেম্বর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শহরের কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সৌদিয়া হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার পরিবেশ না থাকায় সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়াও নওগাঁ শিশু হাসপাতাল ও ডায়ানস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স না থাকা এবং ডিউটি ডাক্তার ও মেডিকেল ডিপ্লোমা নার্স না থাকায় ১০ হাজার টাকা, মান্দা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিককে পাঁচ হাজার টাকা, মেট্রো হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা দেয়ায় পাঁচ হাজার টাকা এবং শাহ নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ এক মাসের জন্য চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
গত ১২ নভেম্বর পোরশা উপজেলার সরাইগাছি মোড়ের মজিদা ক্লিনিককে তিন হাজার টাকা জরিমানাসহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একই কারণে নুর ফাউন্ডেশন ক্লিনিককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও ১৫ দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ, অব্যবস্থাপনার কারণে একতা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা এবং হবির মোড় আল-মদিনা ক্লিনিকের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এছাড়া গত ১৬ নভেম্বর নিয়ামতপুর উপজেলা সদরের নূরেছা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিককে ত্রিশ হাজার টাকা এবং নিরাময় ক্লিনিকের মালিককে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নওগাঁ জেলায় ৮৭টি ক্লিনিক এবং ১৩২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও লাইসেন্স রয়েছে প্রায় অর্ধেকের মতো প্রতিষ্ঠানের। বাকিগুলো লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
সেবার নামে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বিভিন্ন ক্লিনিক। নিয়ম বহির্ভূতভাবে গজিয়ে ওঠা এসব ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছেন।
রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমের মৃত্যুর পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
মান্দা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকের পরিচালক আব্দুস সাত্তার ও শাহ নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক শাহ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আমরা কাগজপত্র প্রস্তুত করে সিভিল সার্জন অফিসে জমা দেব।
নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ত্রুটিগুলো ঠিক না করা পর্যন্ত রোগী সেবা বন্ধ থাকবে। চিকিৎসা সেবায় তাদের যে ঘাটতি আছে সেগুলো ঠিক করে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। তারপর আমরা ক্লিনিক পরিদর্শন করে সবকিছু ঠিক থাকলে আবারও ক্লিনিক পরিচালনা করার অনুমতি দেব।
তবে বিধিনিষেধ না মেনে কেউ যদি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আব্বাস আলী/এসএমএম/জেআইএম