নেত্রকোনা পৌর নির্বাচন : কারো প্রচারণা প্রকাশ্যে কারো গোপনে


প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ১০ নভেম্বর ২০১৫

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না হলেও চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌর নির্বাচন। আর এ ঘোষণায় নেত্রকোনা পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আগাম প্রচার প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতারাও বসে নেই। বিনা যুদ্ধে কোনোভাবেই ক্ষমতাসীন দলীয় প্রার্থীদের সহজে পার পেতে দেবেন না তারা।

ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে- এবার দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এমন ঘোষণায় অনেকেই খুশি হলেও আবার অনেকেই হতাশ। তেমনি জনপ্রিয়তা না থাকলেও দলের উপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার সুবাদে অনেকেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন ভীষণ খুশি। নিজের জনপ্রিয়তা না থাকলেও দলীয় প্রতীকের জোরে নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মেয়র কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এমন প্রার্থীরা বেশিরভাগই স্থানীয় মন্ত্রী, এমপি, জেলা ও থানার পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের কাছে ছুটছে চলেছেন।

Picture-Netrokna
নেত্রকোনা পৌরসভার স্থাপিত হয় ১৮৮৭ সালে। আর এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় ১৯৯৬ সালে। ২১.০২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস থাকলেও ভোটার রয়েছে ৫৮ হাজার ১২৯ জন। এছাড়াও দ্বিতীয় শ্রেণির একটি ও তৃতীয় শ্রেণির আরো তিনটি পৌরসভার রয়েছে এ জেলায়। ডিসেম্বরে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনায় শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। তবে দলীয় মনোনয়নের সিদ্ধান্তের লাভ-ক্ষতি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

আসন্ন পৌর নির্বাচনে সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ বা কৌশল হিসেবে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি-জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। ইতিমধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। এতে আগামী পৌরসভার নির্বাচন জমে উঠতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে দলীয় প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের ভেতরের কোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

Netrokna-2-Habiba
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ততই জমে উঠছে। পুরোনোদের পাশাপাশি অনেক নতুন মুখও প্রার্থীর তালিকায় যোগ হয়েছে। পৌর নির্বাচনে ইচ্ছুক প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার জানান দিচ্ছে নির্বাচনী ময়দানে তাদের প্রার্থিতা।

পৌর নাগরিক ও ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা রং বেরংয়ের ডিজিটাল ব্যানার ফেস্টুন বানিয়ে ঈদ ও পূজা উপলক্ষে পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ভোটারদের মন জয় করতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন তারা। প্রার্থীদের এমন তৎপরতার ফলে ভোটারদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে চারদিকে। প্রচার প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বেশি তৎপর রয়েছে।

অপরদিকে, মামলা, হামলা ও জেল জুলুমের ভয়ে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও বসে নেই। নানামুখী শংকার কথা মাথায় রেখেই এলাকার নেতাকর্মী সমর্থক ছাড়াও জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। নেত্রকোনায় দুই পৌরসভায় এখনও বিএনপির পৌর মেয়র হিসেবে টিকে রয়েছেন দুইজন। তারাও ফের তৎপরতা শুরু করেছেন। রাজনৈতিক কৌশলের নিচে চাপা পড়া জামায়াত নেতাকর্মীরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। তাছাড়া মামলা আর গ্রেফতারের ভয় বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের এখনো তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

Picture-Netrokna
প্রার্থী হলে আবার নতুন করে কোনো মামলার আসামি বানিয়ে দেয়া হবে কিনা এমন শঙ্কাও কম নয়। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে নির্বাচন করাটা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে। বিগত দিনের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতাও খুব একটা সুখকর নয় তাদের। আর যারা এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারাও ঠিকমত তাদের ক্ষমতার চেয়ারে বসতে পারেন নি।
   
সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রতিদিন নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের নিয়ে পাড়া-মহল্লায় গিয়ে গণসংযোগ করছেন। বয়স্কেদের কাছে দোয়া ও সমর্থন চাচ্ছেন প্রার্থীরা। এলাকাবাসীও এই সুযোগে তাদের এলাকার নানাবিধ সমস্যার কথা প্রার্থীদের সামনে তুলে ধরে প্রতিকার দাবি করছেন। প্রার্থীরাও সকল সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে হোটেল রেস্তোরা, বিপণি বিতান, ক্লাব ও রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সর্বত্রই নির্বাচনী আলাপ চারিতায় মুখরিত হয়ে উঠছে স্থানীয় নির্বাচনের উত্তাপ।
 
নেত্রকোনা পৌরসভায় যে সব সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত কুমার রায়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম খান, নেত্রকোনা সরকারী কলেজের সাবেক জিএস ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান রতন, বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও সাবেক ফুটবলার আরিফ খান জয়ের ছোট ভাই জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ও জেলা শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের সভাপতি ফুটবলার মাসুদ খান জনি, নেত্রকোনা সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি আলহাজ্ব গাজী মোজাম্মেল হোসেন টুকু, নেত্রকোনার বর্ষীয়ান নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি অ্যাড. ফজলুর রহমান খানের তনয়া, জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাবিবা রহমান খান শেফালী, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জেলা পরিষদ প্রশাসক মতিয়র রহমান খানের তনয়া নেত্রকোনা সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক কমনরুম সম্পাদিকা অর্পিতা খানম সুমী ও নেত্রকোনা উন্নয়নে নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক খানে আলম খান।

Picture-Netrokn
আর বিএনপি দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে কি-না ? তা সুস্পষ্ট না হওয়ায় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছেন। তারা প্রকাশ্যে তেমন নির্বাচনী তৎপরতা না চালালেও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও দলীয় হাই কমান্ডের সমর্থন লাভের জন্য গোপনে গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন, নেত্রকোনা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এস এম মনিরুজ্জামান দুদু, সাবেক সংসদ সদস্য আবু আব্বাছের ছেলে লতিফ হায়দার ( টিটু আব্বাছ) ও নেত্রকোনা জেলা মহিলা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নেত্রকোনা সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের কমনরুম সম্পাদিকা সাবিনা দেওয়ান কদ্দুছ রনু।

সব কিছু ঠিক থাকলে নেত্রকোনার পৌর নির্বাচনের পাঁচটি পৌরসভায় কে হচ্ছেন নগর পিতা ? তা দেখার জন্য ভোটারদের অপেক্ষা করতে হবে শেষ পর্যন্ত।

কামাল হোসাইন/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।