ক্যান্সার-বন্ধ্যাত্বসহ জটিল রোগের চিকিৎসায় কবিরাজ!
ঝিনাইদহে দৌরাত্ম্য থামছে না কথিত কবিরাজদের। ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে জ্বিন তাড়ানো থেকে শুরু করে ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্বসহ জটিল রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা। অভিযোগ এজন্য রোগীদের কাছ থেকে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। এসব চিকিৎসায় মানবদেহে বড় ধরনের জটিলতার তৈরির আশঙ্কা রয়েছে বলছেন চিকিৎসকরা।
শরীরে দুষ্টু জ্বিন ভর করা, কারো সন্তান না হওয়া, প্যারালাইসিস বা ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্তরা ছুটছেন কবিরাজের কাছে। সেখানে লাঠির মাথায় আগুন ধরিয়ে তাড়ানো হচ্ছে ভূত। পানিপড়া কিংবা শিকর-বাকড়ে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
জেলা সদরের পোড়াহাটি, সাধুহাটি, শৈলকুপার ফলিয়া বটতলা, দেবীনগরসহ প্রতিটি উপজেলায়ই রয়েছে শতাধিক এমন কবিরাজ। এসব চিকিৎসায় জড়িত কবিরাজরা দাবি করছেন, তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর যাদের ডেলিভারি হচ্ছিল না, তাদের ডেলিভারি হচ্ছে। দুষ্টু জ্বিনের আছর থেকে রোগীরা সুস্থ হচ্ছেন।
এসব কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত তারা রোগীদের কাছে টাকা চেয়ে নেন না। রোগী খুশি হয়ে যা দেন তাই নেন। তবে কারো কারো কাছ থেকে তারা ৭-১০ হাজার টাকা নেন বলে জানা গেছে।
সুড়ো পাড়ায় কবিরাজ বাড়ি চিকিৎসা নিতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি অনেক দিন মাথার সমস্যায় ভুগছেন। এ কারণে কবিরাজি চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আরেক রোগী জানান, তিনি নাকে সমস্যার কারণে এখানে এসেছেন। কবিরাজ নাকের মধ্যে মেডিসিন দিয়ে নাক পরিষ্কার করে দিয়ে বললেন, সাত দিনের মধ্যে আল্লাহ রোগ থেকে মুক্তি করে দেবেন।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে শত শত মানুষ কবিরাজি চিকিৎসা নিতে আসেন। স্থানীয়রা বলছেন, এসব রোগী ভালো হয় কি-না জানি না। তবে মাঝে মধ্যে শুনি কেউ ভালো হয়েছেন, আবার কেউ হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উদয়পুর গ্রামের এক কবিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে যারা আসেন তাদের আল্লাহর কালাম আর গাছ-গাছরা দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। যেমন- কারো লিভারের সমস্যা, আমি চিকিৎসা দেয়ার পরে তিনি ভালো হয়ে যান। কারো ডেলিভারি সমস্যা চিকিৎসা দেয়ার পরে ডেলিভারি হয়ে গেল। কারো বাচ্চা হচ্ছে না চিকিৎসা করার পরে বাচ্চা হলো। গতকাল আমার সঙ্গে দেখা করে গেল। চিকিৎসা নেয়ার পর তার একটা ছেলেসন্তান হয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, এখন পর্যন্ত কোনো রোগী আমাকে বলেনি যে আমার এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে উপকার হয়নি। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, ‘চিকিৎসকদের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি নিজেও তো চিকিৎসকের কাছে যাই। এই যে দুদিন আগে শৈলকুপার হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক এসেছিলেন আমার কাছে। কবিরাজের কাছে চিকিৎসক আসবেন, চিকিৎসকের কাছে কবিরাজ যাবেন-এতে অসুবিধা কী?’
ঝিনাইদহের মানবাধিকার কর্মী শরিফা খাতুন জাগো নিউজকে জানান, জেলায় বিভিন্ন সময়ই এমন আজগুবি ঘটনার আবির্ভাব হয়। কোথাও পানিপড়া কিংবা কলের পানিতে রোগ সারছে এমন। এগুলো প্রতিকার করা দরকার।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসক ডা. প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসবে শরীরে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে তৈরি হতে পারে আরও জটিলতা। মানুষের সচেতনতাই সব থেকে বেশি জরুরি।’
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কবিরাজরা চিকিৎসকের সমকক্ষ মনে করে মানুষের সঙ্গে অব্যাহত প্রতারণা করে যাচ্ছেন। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান পরিচালিত হবে।’
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/জেআইএম