হাওরের পানিতে আটকে আছে কৃষকের স্বপ্ন
অডিও শুনুন
বোরো ফসলের অন্যতম ভান্ডার হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। নভেম্বর বা কার্তিক মাস থেকে শুরু হয় বোরো চাষাবাদের কাজ। কিন্তু চলতি বোরো মৌসুমে সময়মতো হাওরের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না কৃষকরা।
কৃষকদের দাবি অপরিকল্পিতভাবে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের রাস্তা অকেজো হয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্যই ফসলরক্ষা বাঁধ কাটাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পরপর চার দফা বন্যা ও ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জের সকল নদী-নালায় প্রয়োজনের তুলনায় পানি বেশি থাকায় সময়মতো নিষ্কাশিত হচ্ছে না হাওরের পানি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকরা। বোরো ধানের বীজতলা তৈরির সময় এসে গেলেও বীজতলা রয়েছে পানির নিচে। এখনও পানির নিচে রয়েছে জেলার পাগনার হাওর, খরচার হাওর, দেখার হাওর, শনির হাওর, মাটিয়ানহাওরসহ ছোট-বড় প্রায় ৫০টি হাওরের বীজতলা।
চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জে বোরো আবাদের জন্য হাইব্রিড ,উফশী ও স্থানীয় জাতের প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কিন্তু ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১১৫০ হেক্টর বীজতলা তৈরি করেছেন কৃষকরা।
উৎপাদিত চারা দিয়ে মোট ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা যাবে। কিন্তু বীজতলার জমিতে পানি থাকায় বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না কৃষকরা। এতে বোরো চাষাবাদে বিলম্ব ও সময়মতো ধানের চারা রোপণ করতে না পারার শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতি বছর এমন সময় বীজ তলায় বীজধান লাগানো হয় কিন্তু এবছর হাওরে পানি আটকা থাকায় বীজতলা এখনও শুকায়নি। হাওরের পানি বের হওয়ায় সকল রাস্তা ভরাট হয়ে পানি খুব ধীর গতিতে বের হচ্ছে।
পাগনার হাওরের কৃষক আশরাফ আলী জাগো নিউজকে জানান, গত মৌসুমে এই সময়ে বীজতলায় ৫০ ভাগ বীজ বপনের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এবার এখনো বীজতলায় হাতই দেয়নি কেউ।
দেখার হাওরের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, হাওরে পানি থাকায় বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না, ফলে বীজধান নষ্ট হচ্ছে। আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি দেরিতে চাষ করলে আগাম বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মাটিয়ান হাওরের কৃষক জলিল মিয়া বলেন, হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান জাগো নিউজকে জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। বীজতলা তৈরিতে হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে বাঁধ কেটে দেয়ার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ভারী বর্ষণ হওয়ায় সুরমা নদসহ হাওর এলাকার নদ-নদীর পানি বেড়ে যায়। এ কারণে হাওর এলাকার পানি নামতে বিলম্ব হচ্ছে। হাওরের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
লিপসন আহমেদ/এফএ/এমএস