সবার সামনে তরুণী বললেন তিনি যৌনপল্লীতে ফিরে যেতে চান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০
ফাইল ছবি

‘কেউ আমাকে যৌনপল্লীতে জোর করে আটকে রাখেনি। আমি সেখানে ভালো ছিলাম এবং আবারও সেখানে ফিরে যাব।’

কেন আবারও যৌনপল্লীতে ফিরতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়িতে তার ৬ বছর বয়সী একটা প্রতিবন্ধী ছেলে, বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই রয়েছে। তারা সবাই ওই ছোট ভাইয়ের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় তিনি বাড়িতে গেলে সবাইকে না খেয়ে মরতে হবে। এছাড়া সে এখন নিষিদ্ধ পল্লীর একজন বাসিন্দা।

শুক্রবার সকালে এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানায় আনার পর উপস্থিত সাংবাদিক, পুলিশ ও পরিবারে সদস্যদের সামনে পল্লীতে আবারও ফিরে যাওয়ার কথা জানান উদ্ধারকৃত তরুণী (২৪)।

জানা গেছে, অভাব, স্বামীর নির্যাতন ও জীবিকার তাগিদে ৬ বছর আগে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে স্বেচ্ছায় যান রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সুমি (ছদ্মনাম)।

কিন্তু সম্প্রতি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে জোরপূর্বক ওই তরুণীকে আটকে রেখে দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন ওই তরুণীর মা। যার প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সকালে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বেবি বাড়িওয়ালীর বাড়ি থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে।

এ খবরে থানায় ছুটে আসেন তরুণীর বৃদ্ধ বাবা-মাসহ ছোট ভাই। তখন থানা পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনে তরুণী জানান, কেউ তাকে পল্লীতে জোর করে আটকে রাখেনি। তিনি সেখানে ভালো ছিলেন এবং আবারও স্বেচ্ছায় সেখানে ফিরে যাবেন।

তিনি জানান, দরিদ্র পরিবারে অভাব অনটনের মধ্যে তিনি বড় হয়েছেন। অল্প বয়সে পারিবারিকভাবে এক ছিঁচকে চোরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে প্রায়ই মারধর খেত তার স্বামী। বাইরে থেকে মার খেয়ে ঘরে ফিরে প্রতিনিয়তই তার ওপর নির্যাতন করতেন। এতে দিনে দিনে তার সংসারে অশান্তি বাড়তে থাকে।

এক সময় তাদের ঘরে সন্তান হয়, কিন্তু প্রতিবন্ধী। এতে স্বামীর অত্যাচার নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে বেঁচে থাকার তাগিদে প্রায় ৬ বছর আগে স্বেচ্ছায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে চলে যান।

এ সময়ে পল্লীর হালিমুন, উম্বার, সুমি, লালমিয়া ও বেবির বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে তিনি বসবাস করেন।

তিনি আরও জানান, পল্লীতে থাকাকালীন দৌলতদিয়া ফকির পাড়া এলাকার একটা ছেলে নিয়মিত তার কাছে আসা-যাওয়া করত। সে মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির। সেই সম্ভবত তার পরিবারের খোঁজ করে তাদের দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করিয়েছে। ওই ছেলেটির ইচ্ছা তাকে বিয়ে করার।

কিন্তু তাকে বিয়ে করলে তার জীবনটা আবারও অশান্তির মধ্যে পড়বে। সেইসঙ্গে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে তার পরিবার।

এ সময় তরুণীর দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকেন বৃদ্ধ বাবা-মা। তাদের বলার কিছুই ছিল না। পরবর্তীতে পুলিশ বৃদ্ধ বাবার হাতে তুলে দেন মেয়েটিকে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তারা দৌলতদিয়া যৌনপল্লী থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। সে সময় তরুণী জানান অভাব-অনটনের কারণে স্বেচ্ছায় তিনি সেখানে আছেন। তারপরও মেয়েটিকে তার বাবার হাতে তুলে দিয়েছেন। মেয়েটি এখন প্রাপ্তবয়স্ক। তিনি কোথায় যাবেন সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়।

রুবেলুর রহমান/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।