জলদস্যুরা দেয় মাছ ধরার লাইসেন্স!


প্রকাশিত: ০৪:২০ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৫
ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের রাম রাজত্ব অব্যাহত রয়েছে। প্রায় বিনা চ্যালেঞ্জে দস্যুরা সাগরে চালিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তপনা। গত রোববারও জলদস্যুরা কয়েকটি ট্রলারে হামলা চালিয়েছে।

এরমধ্যে কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়ার আবদুর রাজ্জাকের মালিকানাধীন এফবি ছমিলা বেলা ১১টার দিকে বঙ্গোপসাগরের পাটুয়ারটেক এলাকা থেকে প্রায় ১৫ মাইল পশ্চিমে জলদস্যুদের তাড়া খেয়ে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরে এসেছে। জলদস্যু আতঙ্কে আরো বহু ট্রলার রোববার ঘাটে ফিরেছে। এ নিয়ে জেলেদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেক জেলে সাগরে মাছ ধরতে যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।   

জানা যায়, সমুদ্রসীমা বিজয় হলেও এর সুফল পাচ্ছে না জেলেরা। বিশাল বঙ্গোপসাগরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবর্তে এখন রাজত্ব করছে সশস্ত্র জলদস্যুরা। সাগরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে ৪১টি জলদস্যু বাহিনী। তাদের হাতে নিয়মিত নিগৃহীত হচ্ছেন জেলেরা। চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন ট্রলার মালিকরা। গত পাঁচ বছরে জলদস্যুদের হাতে ২ শতাধিক মাঝি-মাল্লা প্রাণ হারিয়েছেন। গত এক বছরে বঙ্গোপসাগরে ৬৩ মাঝিমাল্লাসহ ২১ ফিশিংবোট অপহরণ হয়েছে। ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছেন তারা।

গত সপ্তাহেও জলদস্যুদের হামলায় পাঁচ জেলে গুলিবিদ্ধসহ ১৭ জেলে আহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত রোববার বেলা ১১টার দিকে বঙ্গোপসাগরের পাটুয়ারটেক এলাকা থেকে প্রায় ১৫ মাইল পশ্চিমে জলদস্যুদের তাড়া খেয়ে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরে এসেছে শহরের পেশকারপাড়ার আবদুর রাজ্জাকের মালিকানাধীন এফবি ছমিলার মাঝিমাল্লারা।

জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ ঘটনার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, জলদস্যু আতঙ্কে আরো বহু ট্রলার রোববার ঘাটে ফিরে এসেছে। এ নিয়ে জেলেদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ট্রলার মালিকরা বলেন, আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরি। কিন্তু এই লাইসেন্স বঙ্গোপসাগরে কার্যত অকার্যকর। সাগরে নিরাপদে মাছ ধরতে হলে জলদস্যুদের কাছ থেকেও ‘লাইসেন্স’ নিতে হয়। তবে একটি গ্রুপের ‘লাইসেন্স’ নিলে হয় না। নিতে হয় ৪১টি জলদস্যু বাহিনীর লাইসেন্স।

ট্রলার মালিক সূত্র জানায়, জলদস্যুরা পুরো বঙ্গোপসাগরকে ৪১টি ভাগে বিভক্ত করে চালাচ্ছে রামরাজত্ব। আর এদের ‘লাইসেন্স’ না নিলে সাগরে ট্রলার ডাকাতি, মাঝিমাল্লা অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়সহ নানাভাবে জেলেদের হয়রানি করে। এমনকি জেলেদের গুলি করে খুনও করা হয়। এ কারণে জেলেরা এখন জলদস্যু আতঙ্কে  ভুগছেন। বিশেষ করে গত কয়েকদিন আগে সোনাদিয়ার দুই জলদস্যুকে আটক করার পর সেখানকার জলদস্যুরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা জেলে ও ট্রলার মালিকদের হুমকি দিচ্ছে।

জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ডাকাতির কারণে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছেন। সংঘবদ্ধ দস্যুরা প্রায়ই সাগরে ডাকাতি, লুটপাট ও অপহরণ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ডাকাতি বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

জেলেরা জানান, সাগরে এখন জেলেদের কোনো নিরাপত্তা নেই। সাগর মানেই জলদস্যুদের রাজ্য। জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে এখন রাজত্ব করছে ৪১টি জলদস্যু বাহিনী। এর একটি তালিকা সম্প্রতি সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে দেয়াও হয়েছে। তবে তালিকা দেয়া হলেও এখনো জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়নি। ফলে জলদস্যুরা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

সূত্র মতে, সাগরে রাজত্ব চালানো জলদস্যুদের মধ্যে রয়েছে সোনাদিয়া দ্বীপের দুর্ধর্ষ জলদস্যু জাম্বু বাহিনী, সরওয়ার বতইল্যা বাহিনী, জলদস্যু সম্রাট নাগু মেম্বারের ছেলে রাকিব বাহিনী, মো. ছমদের ছেলে জাহাঙ্গীরের বাহিনী, বদি আলমের ছেলে আঞ্জু মিয়ার বাহিনী, এখলাস মিয়ার ছেলে মকসুদ বাহিনী, নুরুল ইসলামের ছেলে বক্করের বাহিনী, ফরুখ আহমদের ছেলে রুহুল আমিন বাহিনী, এখলাছ মিয়ার ছেলে মোকাররম জাম্বুর বাহিনী, কালা মিয়ার ছেলে শফির বাহিনী, একে ফজলুল হকের ছেলে সাইফুলের বাহিনী, মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে মোস্তফার বাহিনী, আলীর ছেলে সুমনের বাহিনী, বদি আলমের ছেলে (আঞ্জুর ভাই) নাগু-২ বাহিনী, শফিক বাহিনী, মৃত কাসিম আলীর ছেলে সিরাজ বাহিনী (বর্তমানে শহরের চরপাড়ার বাসিন্দা), শহরের নুনিয়ারচড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে ফারুক বাহিনী, মহেশখালীর ঘটিভাঙার আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল মোনাফ বাহিনী, কালারমারছড়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর বাহিনী, পূর্ব ঘোনারপাড়ার মোজাহের মিয়ার ছেলে আব্দুস সবুর বাহিনী ও আব্দুল গফুর বাহিনী, পুটিবিলার ইউসুফ আলীর ছেলে সামশুল মাঝি বাহিনী, মাতারবাড়ীর শিমুল বাহিনীর প্রধান শিমুল বাহিনী, রবি বাহিনী ও কর্ণফুলীর ইয়াছিনের ছেলে আহমদ নবী বাহিনীসহ অনেক।  

এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার নান্নু মিয়া জাগো নিউজকে জানান, পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামাদির অভাবে স্থলভাগ  থেকে সাত কিলোমিটারের বাইরে তারা যেতে পারছেন না। সম্বল বলতে আছে একটি মাত্র কাঠের বোট। যেটি দিয়ে সাগরে অভিযানে নামা অনেকটা দুরূহ ব্যাপার। ফলে জলদস্যু ধরতে কোস্টগার্ডকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।