সাহেদের বিরুদ্ধে সিলেট আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে সিলেটের আদালতে এক পাথর ব্যবসায়ীর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। রোববার (০৮ নভেম্বর) সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (১ম) আদালতের বিচারক হারুনুর রশিদ এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
সিলেটের জৈন্তাপুরের পাথর ব্যবসায়ী মাওলা স্টোন ক্রাশার মিলের মালিক মো. শামসুল মাওলার দায়ের করা প্রতারণা মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
৪ মার্চ সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (১ম) আদালতে সাহেদের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার তিনটি প্রতারণা মামলা করেন মো. শামসুল মাওলা। সাহেদের দেয়া ১০ লাখ টাকা করে দুটি চেকে ২০ লাখ টাকা ও আরও একটি চেকে ৫ লাখ টাকা নির্ধারিত সময়ে না পাওয়ায় এ তিন মামলা করেন তিনি।
এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি ও বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আবদুস সাত্তার।
শামসুলের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকার পাথর নিয়ে পুরো টাকাটাই মেরে দেয় প্রতারক সাহেদ। শামসুল জানান, গত বছর হঠাৎ একদিন ঢাকার এক ভদ্রলোক তার কাছ থেকে এক গাড়ি পাথর কেনেন। যাথারীতি নগদে বিলও পরিশোধ করেন সেই ব্যক্তি। যাওয়ার সময় তিনি শামসুল মাওলাকে ঢাকায় গিয়ে তার বসের সঙ্গে দেখা করার প্রস্তাব দেন। ‘বস’ (সাহেদ)-এর সঙ্গে দেখা করলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য পাথর সরবরাহের বড় একটি কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দেবেন বলে শামসুলকে জানান ওই ব্যক্তি। শামসুল মাওলা সরল বিশ্বাসে ঢাকায় গিয়ে শাহেদ নামের কথিত সেই ‘বস’র সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সাহেদ নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দেন।
রাজধানীতে সাহেদের আলিশান অফিস, অফিস কক্ষে টানানো রাষ্ট্রের সব ভিআইপিদের সঙ্গে তোলা ছবি দেখে তার কথা বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না শামসুলের। কথাবার্তার একপর্যায়ে শামসুল মাওলার সঙ্গে ৩০ লাখ টাকার পাথর সরবরাহের চুক্তি করেন সাহেদ। এরপর আরেকদিন বিল আনতে ঢাকায় গেলে তাকে ১০ লাখ টাকা করে ৩০ লাখ টাকার তিনটি চেক ধরিয়ে দেন সাহেদ। খুশি মনে সিলেট ফেরেন শামসুল মাওলা।
কিন্তু পরদিন ব্যাংকে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শামসুলের। ফান্ড স্বল্পতার কারণে দুটি চেক ডিজঅনার হয়। আর অন্য চেকটি তার নিজের অ্যাকাউন্টের নয়, ভুয়া চেক।
বিষয়টি শাহেদকে ফোনে জানাতেই সুর পাল্টে ফেলেন সাহেদ। শামসুল মাওলাকে উল্টো গালাগাল করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। আচমকা এমন প্রতারণায় দিশেহারা হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন শামসুল। এরপর টাকার জন্য বহুবার ঢাকায় গিয়ে সাহেদের অফিসে ধর্না দেন। কিন্তু প্রতিবারই শামসুলকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
একপর্যায়ে ঢাকা উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শাহেদের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন শামসুল মাওলা। জিডির তদন্ত কর্মকর্তা সাহেদকে ফোন দিলে তাকে ‘তুই-তুকারি’ করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দিয়ে হুমকি দেন সাহেদ।
পরে সাহেদ তার অফিসে ডেকে পাঠান শামসুল মাওলাকে। টাকা পাওয়ার আশায় শামসুল আবারও ছুটে যান সাহেদের অফিসে। কিন্তু সেখানে সাহেদের এক ড্রাইভার তাকে পরামর্শ দেন- প্রাণে বাঁচতে হলে এখান থেকে চলে যান। ওই দিন সেখান থেকে রীতিমতো পালিয়ে আসেন শামসুল মাওলা।
পরে আবারও ছুটে যান উত্তরা থানায়। পুলিশের কাছে সহায়তা চান। কিন্তু থানার তৎকালীন ওসি তাকে জানান- সাহেদ খুবই প্রভাবশালী লোক। তার বিরুদ্ধে জিডি করে কোনো লাভ হবে না। বরং তাকে সিলেট আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন ওসি।
যথারীতি সিলেট ফিরে শামসুল মাওলা আদালতে দুটি চেক ডিজঅনারের মামলা করেন সাহেদের বিরুদ্ধে । দিন, মাস, বছর যায়। কিন্তু মামলায় কোনো প্রতিকার পান না তিনি। উল্টো সাহেদ তাকে ফোন দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিতেন।
একপর্যায়ে বিশাল অংকের টাকা দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় শামসুল মাওলার জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। পাওনাদাররা তাকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকেন। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় শামসুল মাওলার। এমনকি পাওনাদারদের টাকা দিতে না পেরে একসময় বাড়ি ছেড়ে ফেরারি জীবন শুরু করেন তিনি।
ছামির মাহমুদ/এএম/পিআর