ফুলগাজীতে ক্ষেতেই পচে গেছে ১০৫ হেক্টর রোপা আমন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০২০

ফেনীর ফুলগাজীতে ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চাপে মুহুরী ও কুহুয়া নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করছে। পানি নেমে যাওয়ায় ক্রমেই ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত চিহ্ন। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়-ক্ষতির অঙ্ক নির্ধারণ করতে কাজ করছে প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ।

এর আগে শনিবার ও রোববার পাহাড়ি ঢলের চাপে ফুলগাজী উপজেলার মুহুরী নদী রক্ষা বাঁধের ২টি স্থানে ভেঙে অন্তত ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ সময় ওই এলাকার ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, মাছের খামার ও বাড়ি ঘর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।

স্থানীয়রা জানায়, এর আগে চলতি বছরের জুন মাসে উপজেলায় নদী রক্ষা বাঁধের ৯ স্থানে ভাঙনের কবলে পড়ে ফসলহানীর মুখে পড়ে স্থানীয়রা। ওই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগেই পুনরায় নদী রক্ষা বাঁধের ভাঙনের স্থানীয়রা এখন প্রায় দিশেহারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুুত করে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হলেও তাতে বিশ্বাস রাখতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।

jagonews24

দু’দিনের পানির চাপে উপজেলায় ১০৫ হেক্টর রোপা আমন ধান ক্ষেতেই পঁচে গেছে। এছাড়াও ৬ হেক্টর শীতকালীন আগাম সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে অন্তত ৬০ জন মৎস্য খামারীর ৪০টি পুকুর ও আসবাবপত্র ডুবে অন্তত ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। দফায় দফায় নদী রক্ষা বাঁধের ভাঙন ফুলগাজী উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের কপালে নিত্য চিন্তার ভাজ ফেলেছে।

জানা যায়, শনিবার দিনভর সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণে অনবরত বৃষ্টিপাত ও ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাডি ঢলের চাপে মুহুরী ও কহুয়া নদী রক্ষা বাঁধের ২টি স্থানে ভাঙনের দেখা দেয়। এসময় মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, ঘনিয়া মোড়া, শাহাপুর ও শ্রীপুরসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। এ কারণে ওই এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কবলে পড়ে। বিশেষ করে কৃষক ও মৎস্যচাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। রোববার রাত থেকে পানি নামতে শুরু করলে ক্ষত চিহ্নগুলো দৃশ্যমান হতে শুরু করে।

jagonews24

ফুলগাজীর দক্ষিণ দৌলতপুুরের কৃষক মো. আফজল মিয়া জানান, জুন মাসে ফুলগাজী ও পরশুরামে বেড়িবাঁধের ৯টি স্থানে ভেঙে ১৬টি গ্রাম ভেসে গেছে। কৃষকরা সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আবার ভাঙনের কবলে পড়ে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে সরকার উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব দিলেও ফসল রক্ষার জন্য ফুলগাজীতে তেমন কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে না। গত কয়েক বছর যাবত বর্ষা মৌসুমে বেড়িবাঁধ ভেঙে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলেও এর প্রতিকারে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। প্রতি বছর এভাবে মৎস্যচাষী ও কৃষকরা ক্রমাগত ক্ষতির কবলে পড়লে তারা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই দ্রুত বেড়িবাঁধের স্থায়ী সমাধান করার দাবি জানান তিনি।

jagonews24

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মো. তোফায়েল আহাম্মেদ চৌধুরী জানান, সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও উজানের পানিতে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভাঙার কারণে ফুলগাজী উপজেলায় ১০৫ হেক্টর রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই এসব ধান ঘরে তোলার উপযোগী হয়ে উঠার আগেই এমন ক্ষতি কিছুতেই মানতে পারছে না প্রান্তিক কৃষকরা।

এছাড়াও ৬ হেক্টর শরৎকালীন সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রকৃত ক্ষতি নিরুপণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রণয়নে কাজ করছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, ফুলগাজীতে দ্বিতীয় দফায় নদী রক্ষা বাঁধের ভাঙনে ৬০টি পুকুরে বন্যার পানি ঢুকে মাছ ভেসে গেছে। এতে করে ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্তত ৪০ মৎস্যচাষী।

jagonews24

তিনি জানান, বন্যায় মাছ, পুকুরের পাড় ও খামারের আসবাবপত্রসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে। পুকুর ভেসে ১২ মেট্টিক টন মাছ ও ৩ লাখ মাছের পোনা খামার থেকে চলে গেছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি বেড়িবাঁধ ভাঙার কারণে রাস্তা-ঘাট, মৎস্যচাষী ও কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার আলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর পূর্বাঞ্চলের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুহুরী ও কুহুয়া নদী রক্ষা বাঁধের বাংলাদেশের আওতায় ৯২ কিলোমিটার অংশে বাঁধে অসংখ্য বাঁক রয়েছে। যার কারণে পানির প্রবাহ মারাত্মক বাধাগ্রস্থ হয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। দ্রুত বাঁকগুলো সোজাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও যেসব স্থানে বাঁধের বাঁকা অংশ সোজা করা যাবে না সেসকল স্থানে ব্লক স্থাপন করে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা করা হবে।

রাশেদুল হাসান/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।