সকাল হলেই ইসহাক ও আনন্দের কাছে ছুটে আসে শত শত শালিক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ০৩ নভেম্বর ২০২০

ভালোবাসা এমন এক শক্তি যা দিয়ে জয় করা যায় সবকিছু। এমনকি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বুনো পাখিরাও ভয়কে জয় করে মানুষের কাছে ছুটে আসে। ভালোবাসার এমনই এক নজির সৃষ্টি করেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার দুই দোকানি।

১৫ বছর ধরে অসংখ্য শালিক পাখিকে খাইয়ে আসছেন তারা। এমনকি করোনা মহামারির চরম সংকটকালেও এই দুই পাখি প্রেমীর খাবার দেয়া একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এই খাবারের জন্য প্রতিদিন কয়েকশ শালিক পাখি মিরপুর পৌর শহরের ব্যস্ততম ঈগল চত্বরে ছুটে আসে। সেখানে মিতালী হয় মানুষ আর পাখির।

তখনও ভোরের আলো ফোটার কিছুটা বাকি। মিরপুর পৌর শহরের ব্যস্ততম ঈগল চত্বরে উড়ে আসছে শত শত শালিক পাখি। বিদ্যুতের তার বা দোকানের কার্নিশে সারি বেঁধে বসছে তারা। ধীরে ধীরে ঈগল চত্বরে দোকানিসহ নানা শ্রেণির মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। ঈগল চত্বর চিরে যাওয়া রাজপথও ব্যস্ত হয়ে ওঠে যানবাহনের চাপে।

এরই মধ্যে চা দোকানি ইছাহক আলী ও হোটেল মালিক আনন্দ দেবনাথ মুঠো মুঠো চানাচুর আর পরোটার টুকরো ছড়িয়ে দেন ব্যস্ত রাজপথে। মুহূর্তেই বিদ্যুতের তার আর দোকানের কার্নিশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক উড়ে এসে মহাভোজে যোগ দেয় মনের আনন্দে।

jagonews24

রাস্তায় মানুষ ও গাড়ি চলাচল করলেও নির্ভয়ে খেয়ে চলেছে শালিকের ঝাঁক। মানুষের গলার শব্দ শুনলেই যে পাখি প্রাণভয়ে পালায় সেই পাখিই এখানে মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে যেন একাকার।

এক পর্যায়ে ইছাহক আলী চানাচুরের প্যাকেট নিয়ে দোকানে ঢুকে পড়েন। তখন পাখিগুলোও তার পিছু নেয়।

গত ১৫ বছর ধরে এই দুই দোকানি এভাবেই খাবার খাইয়ে পাখিগুলোর বন্ধু হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিন ভোরে এমন এক নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করেন ঈগল চত্বরের দোকানি আর পথচলতি মানুষ।

চা দোকানি ইছাহক আলী বলেন, ভোরে যখন সবার আগে দোকান খুলে দুধ জাল দেয়া পাত্রটি পরিষ্কার করতাম, পাত্রের গায়ে লেগে থাকা দুধের পোড়া অংশ চেঁছে তুলে রাস্তায় ছড়িয়ে দিতাম। তখন দুই একটি শালিক পাখি এসে সেগুলো খেয়ে যেত। রোজ সকালেই ঘটত এমনটি। দিন যত গড়ায় শালিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

jagonews24

তিনি বলেন, তখন শালিকগুলোর প্রতি এক ধরনের টান তৈরি হলো আমার। এরপর থেকে প্রতিদিন বড় সাইজের এক প্যাকেট চানাচুর বরাদ্দ করলাম ওদের জন্য। এখন তো শত শত শালিক আসে খাবার খেতে। দুটো পয়সা খরচা হলেও ওদের কলতানে যে কী আনন্দ পাই তা বলে বোঝাতে পারব না।

ইছাহকের দোকানের পাশে আনন্দ দেবনাথের খাবার হোটেল। দিন শেষে কিছু না কিছু খাবার বেঁচে যায়। ইছাহকের দেখাদেখি আনন্দ দেবনাথও শালিকের ভালোবাসায় মজেছেন। তিনিও রোজ শালিকদের ভোজে খাবারের যোগান দেন।

আনন্দ বলেন, ওদের তো বাঁচিয়ে রাখা দরকার। ওরা তো আমাদের ক্ষতি করে না বরং উপকার করে।

স্থানীয়রা বলেন, ভালোবাসার বিনিময়ে যে অনেক কিছু জয় করা যায় সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে ইছাহক আর আনন্দ দেবনাথ। ভালোবাসার বিনিময়ে পাখির সঙ্গে তারা দুজন সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন।

jagonews24

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, শালিক পাখি আসলে ফসলবান্ধব একটি পাখি। বিশেষ করে আমন মৌসুমে তারা ধানখেতে ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে থাকে। এতে কৃষকদের কীটনাশক খরচ অনেকাংশে কমে যায়। এ কারণে শালিক পাখিদের বাঁচিয়ে রাখা দরকার।

তিনি বলেন, শালিক পাখিদের খাবার খাইয়ে মিরপুরের দুই দোকানি একদিকে যেমন মহান কাজ করছেন, তেমনি পাখিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন।

কুষ্টিয়া বার্ড ক্লাবের সভাপতি এসআই সোহেলও দুই দোকানির এই উদ্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, কিছু মানুষের কারণে আমাদের অনেক প্রজাতির পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। সেই পাখিদের ভালোবেসে খাবার খাইয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই দুই দোকানি।

আল-মামুন সাগর/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।