মাঝরাতে কিশোর-কিশোরীর বাল্যবিয়ে দিলেন সালিশকারীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৯:০০ এএম, ০২ নভেম্বর ২০২০
ফাইল ছবি

ময়মনসিংহের নান্দাইলে থানায় আটক দুই কিশোর-কিশোরীকে ছাড়িয়ে এনে বাল্যবিয়ে পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে সালিশকারীদের বিরুদ্ধে।

ওই কিশোর স্থানীয় আবুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও কিশোরী নবম শ্রেণির ছাত্রী।

রোববার (১ অক্টোবর) রাত তিনটার দিকে নান্দাইল পৌর বাজারের একটি সরকারি ভবনের নিচতলায় বিয়ে পড়ান সালিশকারীরা।

স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার শেরপুর ইউনিয়নের লংগারপাড় বাজার এলাকা থেকে নবম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভনে নিয়ে আসে ওই কিশোর। পরে মেয়েটিকে বিভিন্ন জায়গায় দুদিন রেখে শনিবার বিকেলে বাড়ির কাছে রেখে পালিয়ে যায়।

এমন অবস্থায় স্কুলছাত্রী স্বজনদের কাছে সবকিছু খুলে বললে কৌশলে ওই কিশোরকে লংগারপাড় বাজারে ডেকে আনেন স্থানীয়রা। রাত হয়ে গেলে ব্যবসায়ী মো. জুলহাস মিয়া তাদের আটকে রেখে থানায় খবর দেন। পরে রাত ১১টার দিকে তাদের দুজনকে উপজেলার লংগারপাড় বাজার থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় নান্দাইল মডেল থানার পুলিশ।

কিশোর-কিশোরীকে থানায় নেয়ার পর ওই দিন রাতেই স্থানীয় সালিশকারী রফিকুল ইসলাম রেনু, মেয়ের মামা ও ছেলের বাবাসহ অন্যান্য সালিশকারীরা থানায় গিয়ে তাদের বিয়ে দেয়ার শর্তে ছাড়িয়ে আনেন।

পরে থানা থেকে বের হয়ে রাতেই নান্দাইল পৌর বাজারের একটি সরকারি ভবনের নিচতলায় বিয়ে পড়ানো হয় তাদের।

এ বিষয়ে স্কুলছাত্রীর মামা বলেন, মেয়ের বাবা মারা যাওয়ার পর আমার বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া করে সে। বৃহস্পতিবার বিয়ের কথা বলে আমার ভাগ্নিকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায় সে। পরে শনিবার বিকেলে আবার আমার বাড়ির কাছে রেখে পালিয়ে যায়। পরে ৩ লাখ টাকা কাবিন করে নান্দাইল পৌর বাজারের একটি সরকারি ভবনের নিচতলায় বিয়ে পড়ান সালিশকারীরা।

এ বিষয়ে সালিশকারী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুই পরিবারবের সম্মতিতে তাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। তবে তাদের বিয়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।

তবে কিশোর-কিশোরীর বিয়ে হয়েছে স্বীকার করে আরেক সালিশকারী শেরপুর ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মিল্টন বলেন, লংগাড়পাড় বাজারে ওই ছেলেকে আটক করার খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার দিয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম। তবে আমি কাউকে থানা থেকে ছাড়ানোর জন্য বা বিয়ে পড়ানোর জন্য সুপারিশ করিনি।

এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, ওই দুই জনকে থানায় আনা হয়েছিল। পরে স্থানীয়দের সুপারিশে তাদের ছেড়ে দিয়েছি। তবে তাদের বিয়ে হয়েছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদ উদ্দিন বলেন, থানা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাল্যবিয়ে পড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মঞ্জুরুল ইসলাম/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।