ভিক্ষুকের মৃত্যুতে শোকের পোস্টার, দোয়া অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ৩১ অক্টোবর ২০২০

পরিচয়হীন ভিক্ষুক আইয়ুব পাগলার জন্য ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বাসিন্দারা। আইয়ুব পাগলা আজ বেঁচে নেই, কিন্তু রেখে গেছেন অসংখ্য ভালোবাসার মানুষ। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। তার জন্য দোয়া কামনায় হাজারো মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আইয়ুব পাগলা বলতেন ‘একটা ট্যাকা দে, মুই ভাত খামো।’ তার জন্ম কোথায়? তার পরিচয় কি? কেউ বলতে পারেন না। জীবন যুদ্ধে পরাজিত সেই আইয়ুব পাগলা চলতি বছরের ২০ সেপ্টোবর বিকেলে মারা যান। তবে তিনি রেখে গেছেন অসংখ্য ভালোবাসার মানুষ।

আইয়ুবের মৃত্যুর খবরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের হাজারো মানুষ মর্মাহত হয়। আইয়ুবকে উত্তরউল্ল্যা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। আইয়ুবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কেউ কাফনের কাপড়, কেউ বাঁশ, কেউ আগরবাতি নিয়ে দাফনের জন্য এগিয়ে আসেন।

PIC-Gaibandha02.jpg

মৃত্যুর পর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শোকবার্তার ব্যানার-পোস্টার বিভিন্ন স্থানে লাগানোর পাশাপাশি মানুষের ফেসবুকেও জায়গা করে নিয়েছে এই আইয়ুব পাগলা। আইয়ুব পাগলার জানাজার পর তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানের জন্য মজলিস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের অর্থায়নে ৪০ দিন পরে (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে সাঘাটার ঐতিহ্যবাহী ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক পরিসরে ‘আইয়ুব-এর মজলিস’ সম্পন্ন হয়। মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও ওই মজলিসে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে মুসলমাদের জন্য তিনটি গরু ও একটি খাসি এবং হিন্দুদের জন্য দুটি খাসি আলাদা রান্না করা হয়েছিল। এই মজলিসের উদ্ধোধন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।

সাঘাটার উল্যাবাজার এলাকার কাপর ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, আইয়ুব পাগলার জন্ম কোথায় আর কীভাবে তিনি সাঘাটার উল্যাবাজারে এসেছিলেন এর সঠিক কোনো তথ্য জানা না থাকলেও এখানে অনেক দিন বসবাস করেছেন। তার প্রতি সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভালোবাসা ছিল।

PIC-Gaibandha02.jpg

সাঘাটার উল্ল্যাবাজার কলোনীর বাসিন্দা জিল্লুর রহমান বলেন, আইয়ুব পাগলা কারও ক্ষতি করতো না। ক্ষুধা লাগলে মানুষের কাছে খাবার চাইতো সবাই ওকে ভালোবাসতো। হঠাৎ মারা যাওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত।

একই এলাকার আব্দুল মালেক জানান, আইয়ুব পাগলাকে এতো মানুষ ভালোবাসতো কেউ বুঝতে পারেনি। তার মৃত্যুর পর এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে তার পাশে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কাফিল উদ্দিন বলেন, আইয়ুব পাগলার মজলিসে এসে আমরা অবাক। একজন পাগল ভিক্ষুক এতোটা জনপ্রিয় হয় আগে জানতাম না।

PIC-Gaibandha02.jpg

সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল বলেন, মাঝে মাঝে আইয়ুব পাগলা অদৃশ্য হয়ে যেত। ১০-২০ দিন আবার কখনও ১-২ মাস পর আমাদের মাঝে হাজির হতো। এই পাগলের প্রতি হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসার প্রমাণ মিলেছে তার মজলিসের চিত্র দেখে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদ ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আইয়ুবের জানাজার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মজলিস করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার আইয়ুয়ের মজলিস করা হল। পরপারে আইয়ুব যেন শান্তিতে থাকে সেই দোয়া করি। আইয়ুব পাগলা সবার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

জাহিদ খন্দকার/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।