‘আর কিছুই রইলো না আমার’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২০

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পদ্মা সেতুর পূর্বপাশে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত আকস্মিক ভাঙনে প্রায় ২০০ মিটার এলাকা পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়েছে। তলিয়ে গেছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়নি শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের আহম্মদ মাঝিরকান্দি, মুনসুর মোল্লাকান্দি ও হাজি ওসিমদ্দি চরকান্দি এই তিনটি গ্রামের মানুষ পদ্মা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ভাঙন কবলিত নদীর পাড়ে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।

River-(2).jpg

আহম্মদ মাঝিরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. রোকন মাঝি, ইমান দেওয়ান, আব্দুল হাই সরদার, আনসার আলী শেখ, আনোয়ার মাঝিসহ অনেকেই বলেন, ওই তিনটি গ্রামে গত দেড় মাস যাবত ভাঙন চলছে। ভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, ফসলি জমি, বাগান নদীগর্ভে চলে গেছে। তিনটি গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০০ মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে।

তারা বলেন, পদ্মা সেতুর নিচের বাঁধের কারণে আহম্মদ মাঝিরকান্দি, মুনসুর মোল্লাকান্দি ও হাজি ওসিমদ্দি চরকান্দিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা সব কিছু হারাব। তাই দ্রুত স্থায়ী বাঁধের ব্যবস্থা করার দাবি তাদের।

ভাঙনে সব হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আহম্মদ মাঝিরকান্দি গ্রামের আবুল ফকিরের স্ত্রী লালমতি বেগম (৫৫) বলেন, আমার ১৪ বিঘা জমি ছিল। জমিতে আটটি ঘর, ফসলি জমি, বাগান ছিল। আমাদের বাগানে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফল হত। দেড় মাসের নদী ভাঙনে সব নদীগর্ভে চলে গেছে। আমার সবকিছু শেষ। আর কিছু রইলো না, সব শেষ। স্বামী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব?

River-(2).jpg

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত দেড় মাসে ওই তিনটি গ্রামের ফরিদা বেগম, লাল মতি, শিরিয়া বেগম, মো. রোকন মাঝি, ইমান দেওয়ান, আব্দুল হাই সরদার, আনসার আলী শেখ, আনোয়ার মাঝি, মজিবর মাদবর, আব্দুল খানসহ প্রায় ১০০ পরিবার তাদের সব হারিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। এর মধ্যে ৫০টি পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

গ্রামবাসী বলছেন দেড় মাসে চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ কেউ তাদের ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করেনি। তারা ত্রাণ চানও না, চান স্থায়ী বাঁধ। থাকার একটু যায়গা।

পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাল চাঁন মাদবর মুঠোফোনে বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের বিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবগত করা হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পর্যায়ক্রমে সহযোগিতা করা হবে।

River-(2).jpg

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ভূইয়া জানান, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এইচএম আহসান হাবীব জানান, দেড় মাস আগে ওই গ্রামগুলো ভিজিট করেছিলাম। ওই এলাকা পদ্মা সেতুর মাঝামাঝিতে পড়েছে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের বিষয়টি দেখার কথা। বর্তমানে ভাঙছে এটা আমার জানা নেই। তবুও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বাঁধ রক্ষায় ব্যবস্থা নেব।

ছগির হোসেন/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।