রাকিব হত্যা : ২ আসামির ফাঁসির আদেশ
খুলনায় পৈশাচিক নির্যাতনে নিহত চাঞ্চল্যকর শিশু শ্রমিক রাকিব হত্যা মামলায় প্রধান আসামি শরীফ খান ও তার চাচা মিন্টুকে সর্বোচ্চ শস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই মামলার অপর আসামি শরীফের মা বিউটি বেগমকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
রোববার জনাকীর্ণ আদালতে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোসা. দিলরুবা সুলতানা এই রায় ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে (তিন মাস) এই রায় ঘোষণা করা হয়। তবে শরীফের মা বিউটি বেগমের সাজা না হওয়ায় আদালত চত্বরেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন রাবিকের আত্মীয়-স্বজন। এসময় তারা আদালতের সামনের রাস্তায় বসে পড়েন।
গত ৩ আগস্ট বিকেলে খুলনার টুটপাড়া কবর খানা মোড়ে শরীফ মোটর্সে মোটরসাইকেলের কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে শিশু রাকিবের মলদ্বারে বাতাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অতিরিক্ত বায়ুর চাপে রাকিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেয়া হলে সেখান থেকে রাকিবকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাকিবের অবস্থার অবনতি হলে রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাবার চেষ্টাকালে তার মৃত্যু হয়।
শিশু রাকিবকে নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শরীফ ও মিন্টু মিয়াকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন ক্ষুব্ধ জনতা। পরে শরীফের মা বিউটি বেগমকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
পৈশাচিক নির্যাতনে শিশু রাকিবের মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন খুলনাবাসী। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন, সভা, সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন চলে দিনের পর দিন।
এ ঘটনার পরদিন ৪ আগস্ট নিহত রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম হাওলাদার বাদী হয়ে তিনজনের নামে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ০৪)।
২৫ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) কাজী মোস্তাক আহমেদ এজাহারভুক্ত তিন আসামি মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক ওমর শরীফ, তার কথিত চাচা মিন্টু খান ও শরীফের মা বিউটি বেগমকে অভিযুক্ত করে ২৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ৬ সেপ্টেম্বর মামলাটির বিচার কাজ শুরুর জন্য নথি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। ৮ সেপ্টেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি নথিভুক্ত হয়।
এরপর দায়রা জজ আদালতে ৫ অক্টোবর মামলার চার্জগঠন করা হয়। চার্জ গঠনের পর ১১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্য ৪০ জন সাক্ষীর মধ্য ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। পরে আরও তিন জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
২৮ অক্টোবর ৩৪২ ধারায় আসামিদের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এসময় আসামিরা নিজেদের নির্দােষ দাবি করেন। ১ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত ৮ নভেম্বর রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।
এমজেড/এমএস