রিফাত হত্যা : কিশোর আসামিদের মধ্যে মেধাবী ও প্রতিভাবানের ছড়াছড়ি
অডিও শুনুন
বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১৪ কিশোর আসামির মধ্যে অনেকেই মেধাবী। তাদের মধ্যে তিনজনই পিইসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে গোল্ডেন জিপিএ-৫। এছাড়াও ক্রিকেট, দাবা ও হকি খেলায় পারদর্শী কয়েকজন। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন সুযোগ পেয়েছে বরগুনা জেলা ক্রিকেট ও হকি দলেও।
পরিবারের উদাসীনতা, সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক মেরুকরণ আর সর্বনাশা মাদকের ছোবলে অদম্য মেধাবী ও প্রতিভাবান এসব কিশোর আজ অন্ধকার জগতে। সামাজিক এ সংকট নিরসনে দায়িত্ব নিতে হবে সংশিষ্ট সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেই। এমনটাই মনে করেন বরগুনার স্থানীয় সচেতন মহল।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান কিশোর আসামি রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজী। ২০১৯ সালের ২৬ জুন যখন রিফাত শরীফকে হত্যা করা হয় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। এই বয়সেই রিশান জড়িয়ে পড়ে মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে।
পুলিশের খাতায় রিশানের অপরাধের চিত্র উঠে এলেও উঠে আসেনি একজন অদম্য মেধাবী রিশানের ঈর্ষণীয় ফলাফলের তথ্য। উঠে আসেনি পিইসি, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় তার গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর।
একজন মেধাবী রিশানের অপরাধী হয়ে ওঠার গল্পও উঠে আসেনি। শুধু লেখাপড়ায় নয় উপস্থিত বক্তৃতা, রচনা প্রতিযোগিতা, তথ্যপ্রযুক্তি- সবক্ষেত্রেই তুখোড় মেধাবী রিশান।
শুধু রিশান নয়; পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে রিশানের মতো গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে এ মামলার অপর দুই কিশোর আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার ও মো. নাঈম।
এছাড়াও অভিযুক্ত বাকপ্রতিবন্ধী জয়চন্দ্র সরকার ওরফে চন্দন, আবু আব্দুল্লাহ রায়হান, রাতুল সিকদার জয়ও অদম্য মেধাবী। পরিবারের অসচেতনতার কারণেই তারা আজ অন্ধকার পথের যাত্রী।
এ বিষয়ে রিশান ফরাজীর মা রেশমা বেগম বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপ্রমোশন দেয়া হয়েছে। এখন রিশান এইচএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাবে। রিশান সবসময় বলতো ‘আম্মু আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব।’ অথচ নষ্ট রাজনীতির কারণে আমার মেধাবী ছেলের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল।
এ মামলায় অভিযুক্ত কিশোর রাতুল সিকদার জয়ের মামা বিপ্লব পহলান বলেন, মামলার সময় ভাগ্নের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। সে একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৫০ এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
অভিযুক্ত আরিয়ান হোসেন শ্রাবণের বড় ভাই আতিক ইশতি বলেন, শ্রাবণ খুব বেশি মেধাবী না হলেও খেলাধুলায় সে বেশ পারদর্শী। বিশেষ করে শ্রাবণ ভালো দাবা খেলতে পারত। দাবায় সে একাধিকবার প্রথম পুরস্কারও পেয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় ১৪ জন কিশোর আসামি জড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই সম্ভাবনাময় অদম্য মেধাবী। এরকম মেধাবীরাই শিক্ষাজীবন শেষে বড় পদে আসীন হন। অথচ পরিবারের উদাসীনতা, সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক মেরুকরণ আর সর্বনাশা মাদকের ছোবলে সম্ভাবনাময় এসব অদম্য মেধাবী ও প্রতিভাবান কিশোর আজ অন্ধকার জগতে।
এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বরগুনার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান বলেন, সামাজিক দায়িত্ব, রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব এবং রাষ্ট্রের দায়িত্বের মাধ্যমে এরকম মেধাবীদের আমরা গড়ে তুলতে পারছি না। পরিবারের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, অনেক সময় সামাজিকভাবে তারাও সে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন। এর ফলে মেধাবীরা বিপথগামী হচ্ছে। এ দায় শুধু পরিবারের নয়; এ দায় সমাজের, রাষ্ট্রেরও।
এফএ/জেআইএম