আলু নেই বরিশালের তিন উপজেলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৯:১২ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২০

বরিশালের তিন উপজেলায় আলুর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলাগুলোর পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আলুর সরবরাহ না থাকায় এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জেল-জরিমানার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জেলার গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার কয়েকজন আড়তদার বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম আলুর পাইকারি বাজার গৌরনদীর টরকী বন্দর, মাহিলাড়া, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুরের শিকারপুর। এসব আড়ত থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা আলু কিনে নিয়ে যান। এবার আড়তগুলো প্রায় আলুশূন্য।

এর কারণে হিসেবে আড়তদাররা বলেন, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চল বিভিন্ন জেলা থেকে গৌরনদীর টরকী বন্দর, মাহিলাড়া, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুরের শিকারপুরে আলু আসে। কিন্তু গত আট থেকে ১০ দিন ধরে ওইসব স্থান থেকে আলু আসছে না। তাছাড়া সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আলু বিক্রি করতে গিয়ে লোকসানের মুখেও পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের জেল-জরিমানার শিকার হতে হচ্ছে। এসব কারণে পাইকারি থেকে খুচরা বিক্রেতারা আলু বেচাকেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই আড়তগুলোতে আলুর সংকট দেখা দিয়েছে।

আড়তদাররা আরও বলেন, কৃষিবিপণন অধিদফতর থেকে ভোক্তাপর্যায়ে ৩৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৭ টাকা এবং আড়তে ৩০ টাকা কেজি আলু বিক্রি করতে বলা হয়েছে। তবে বন্যা, বৃষ্টি, পরিবহন ও নানা অজুহাত দেখিয়ে পাইকারি দামে উত্তরাঞ্চল ও মুন্সিগঞ্জের বেশিরভাগ ভাগ আড়তদার আলু পাঠাতে চাচ্ছেন না।

টরকী বন্দরের এক আড়তদার বলেন, একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এখনই যদি এর লাগাম টেনে না ধরা হয়, তাহলে সামনে আরও নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।

টরকী বন্দরের ‘তুহিন বাণিজ্যালয়’ নামে একটি আড়তের মালিক মো. রিপন হাওলাদার জানান, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তরাঞ্চল ও মুন্সিগঞ্জ থেকে টরকী বন্দরের কোনো আড়তে আলু আসছে না। এ কারণে আলুর সংকট দেখা দিয়েছে।

মাহিলাড়া বাজারের পাইকারি আড়তদার বারেক সরদার জানান, কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৭ টাকা এবং আড়তে ৩০ টাকা কেজি আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এ দামে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তরাঞ্চল ও মুন্সিগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ওই দামে আলু পাঠাতে রাজি নন।

আগৈলঝাড়া বাজারের পাইকারি আড়তদার সোহরাব হোসেন মোল্লা বলেন, সরকার নির্ধারিত পাইকারি দামে আলু কেনা যাচ্ছে না। বেশি দামে কিনে তারপর আড়তে নিয়ে আসতে পরিবহন খরচ আছে। তারপর দু-এক টাকা মুনাফা করতে গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জেল-জরিমানার শিকার হতে হয়।

শিকারপুর বন্দরের পাইকারি আড়তদার জয়নাল আবেদীন বলেন, শিকারপুর বন্দরের আড়তগুলো প্রায় ফাঁকা। এখানকার আড়তগুলোতে আলুই বেশি বিক্রি হতো। তবে সরবরাহ না থাকায় ব্যবসায়ী, কর্মচারী, শ্রমিকদের অলস সময় পার করতে হচ্ছে।

টরকী বন্দর, মাহিলাড়া, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুরের শিকারপুরের বেশ কয়েকজন আড়তদার বলেন, আলু সংকটের বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সমিতি, সরকারদলীয় নেতাদের জানানো হয়েছে। তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আলু সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

সাইফ আমীন/বিএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।