চালের পোকার উৎস খুঁজতে তদন্ত কমিটি!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৮:৫০ এএম, ২২ অক্টোবর ২০২০

অডিও শুনুন

আমন চালের সংকট মেটাতে বেতাগী খাদ্যগুদাম থেকে ১৭০ মেট্রিক টন চাল আনা হয়েছিল বরগুনা খাদ্যগুদামে। কিন্তু বিতরণের জন্য এসব চালের বস্তা খুলতেই আবিষ্কার হয় খাবার অনুপযোগী নিম্নমানের পোকায় খাওয়া চাল।

বেতাগী খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের গুদামে এমন বাজে কোনো চাল ছিল না।পরিবহন ঠিকাদারের দাবি, খাদ্যগুদাম থেকে যেমন বস্তা দেয়া হয়েছে সেগুলোই তিনি নিয়ে এসেছেন।

বরগুনা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবশ্য এসব চাল খারাপ মানতে নারাজ। তিনি দাবি করেন, খামালের নিচের কিছু বস্তার চাল এমন, বাকিটা ভালো আছে।

গুদামের শ্রমিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য, ১৭০ মেট্রিক টনের সব চালেই এমন পোকা।

Borguna

এত কথায় সমীকরণ মিলছে না জেলা খাদ্য বিভাগের কর্তাদের। পোকা এলো কোথা থেকে এমন প্রশ্নের সমাধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, বরগুনা সদর খাদ্যগুদামে ভিজিডি, ভিজিএফ মৎস্য, জিআর ও খাদ্যবান্ধব খাতে বিতরণের জন্য আমন চালের সংকট দেখা দেয়ায় বেতাগী খাদ্যগুদাম থেকে ১৭০ মেট্রিক টন চাল আনার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা খাদ্য বিভাগ। এসব চাল পরিবহনের জন্য গত ৫ অক্টোবর মেসার্স খোকন সমাদ্দার ও মেসার্স মনিন্দ্রনাথ সরকার নামে বরগুনার দুটি নৌপরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। কার্যাদেশ মোতাবেক ওইসব চাল নৌপথে বরগুনায় পৌঁছায়। বরগুনা সদর খাদ্যগুদামের সেসব চাল খামালাত করা হয়।

কিন্তু বিতরণের জন্য এসব চাল নামানোর সময় শ্রমিকরা বস্তার ভেতর নিম্নমানের পোকায় ধরা চাল দেখতে পান। পরে বস্তা খুললে খাবার অনুপযোগী চাল বের হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুদামের কয়েকজন শ্রমিক জানান, বেতাগী থেকে আনা প্রায় সব বস্তার চালেরই একই অবস্থা। নিয়মানুসারে এসব চাল আলাদা রাখার কথা থাকলেও গুদামের খামালেই ওই বস্তা রাখা হয়।

গণমাধ্যমকে এ খবর জানানোর দায় দিয়ে পরদিনই একজন শ্রমিককে ছাঁটাই করে গুদাম কর্তৃপক্ষ।

Borguna-1

নৌপথে চাল পরিবহনের ঠিকাদার খোকন সমাদ্দার বলেন, বেতাগী খাদ্যগুদাম থেকে বস্তা মেপে চাল দেয়া হয়েছে। আমরা ওই চাল নৌপথে বরগুনায় পৌঁছে দিয়েছি। বস্তার ভেতরে চাল ভালো কি মন্দ এসব আমাদের দেখার কথা না বা দেখার বিষয়ও না।

একই বক্তব্য অন্য ঠিকাদার মনিন্দ্রনাথ সরকারেরও।

বেতাগী থেকে আনা সব চালই যে নষ্ট এমনটা মানতে নারাজ বরগুনা সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জলিল সিকদার।

তিনি বলেন, ‘খামালের নিচে থাকায় কয়েক বস্তা চাল নষ্ট পাওয়া গেছে। ওই বস্তাগুলো আলাদা করে রাখা হয়েছে।’

কিন্তু বেতাগী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের দাবি, তার গুদামে কখনোই পোকায় ধরা বাজে চাল রাখা হয়নি। গুদাম থেকে ভালো চাল সরবরাহ করা হয়েছে।

Borguna-2

এদিকে বস্তার চালে পোকা প্রবেশ করল কোথা থেকে তা অনুসন্ধান শুরু করেছে জেলা খাদ্য বিভাগ। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শাহাবুদ্দিন আকন্দ জানিয়েছেন, কোথা থেকে কীভাবে বস্তাপচা চাল এলো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে জেলা খাদ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

অন্যদিকে খাদ্য বিভাগের কর্মচারী থেকে শুরু করে কর্তাব্যক্তিদের অনেকেই চাল নিয়ে নয়-ছয়ের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করছে নাগরিকদের সংগঠন জেলা পাবলিক পলিসি ফোরাম।

সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসান ঝন্টু বলেন, বরগুনায় চাল চালাচালি করা একটি চক্র রয়েছে। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে গুদাম থেকে চোরাই চাল কিনে বিক্রি করা থেকে শুরু করে গুদামের ধান চাল সরবরাহের নামে নানা কারসাজি করে আসছে। এর সাথে খাদ্য বিভাগেরও জোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।