প্রাইভেটকারে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত বেড়ে ৪
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভাঙ্গাগেটে একটি প্রাইভেটকারে খুলনাগামী মহানন্দা ট্রেনের ধাক্কায় ভাই-বোনসহ প্রাইভেটকারের চার যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় প্রাইভেটকারের অপর দুই যাত্রী মারাত্মক আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- প্রাইভেটকারের মালিক নড়াইল জেলার ভুয়াখালী গ্রামের প্রকৌশলী হীরক তালুকদার (৪০), তার বোন শিল্পী বেগম (৩৫), ভাগনি রাইসা (৭) ও বন্ধু আশরাফুল ইসলাম (৪৫)। আহত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন নিহত প্রকৌশলী হীরক তালুকদারের স্ত্রী শাওন ও একমাত্র মেয়ে হুমায়রা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খুলনাগামী মহানন্দা ট্রেন ভাঙ্গাগেট পার হওয়ার সময় ভৈরব ব্রিজের সংযোগ সড়ক দিয়ে আসা একটি প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ট্রেনটি প্রাইভেটকারটিকে ঠেলে ২০০-৩০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে থেমে যায়। কারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে কারটি বের করে আনলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ঘটনাস্থলেই হীরক তালুকদার, শিল্পী বেগম ও আশরাফুল ইসলাম নিহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায় সাত বছরের শিশু কন্যা রাইসা। দুর্ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হতাহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন, নড়াইল থেকে তারা নওয়াপাড়ায় ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। উপজেলার নওয়াপাড়া বাজারে এলবি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পর প্রাইভেটকার নিয়ে নড়াইলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন প্রকৌশলী হীরক তালুকদার। তিনি নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। যশোর হয়ে নড়াইল যেতে সময় বেশি লাগার কারণে বিকল্প সড়ক হিসেবে অভয়নগরের ভাঙ্গাগেট এলাকায় ভৈরব ব্রিজের সড়ক ব্যবহার করছিলেন তারা।
পথিমধ্যে রেললাইন অতিক্রম করার সময় ট্রেনের সামনে পড়ে প্রাইভেটকারটি। এতে সংঘর্ষে দুমড়ে-মুচড়ে যায় প্রাইভেটকারটি। ঘটনাস্থলে প্রকৌশলী হীরক তালুকদার, বোন শিল্পী ও বন্ধু আশরাফুল ইসলামের মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সাত বছর বয়সী রাইসা।
নওয়াপাড়া রেল স্টেশনের মাস্টার মহসীন রেজা বলেন, ভৈরব নদের ওপার থেকে প্রাইভেটকারটি ভৈরব ব্রিজ পার হয়ে যশোর-খুলনা মহাসড়কে উঠছিল। ভাঙ্গাগেট এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় খুলনাগামী মহানন্দা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে ২০০-৩০০ ফুট দূরে ছিটকে পড়ে। প্রাইভেটকারে থাকা দুই শিশুসহ ছয়জনের মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। সাত বছরের শিশু রাইসা অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর মারা যায়। নিহত প্রকৌশলী হীরক তালুকদারের স্ত্রী শাওন ও একমাত্র মেয়ে হুমায়রাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
অভয়নগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রেনের সঙ্গে প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই এক শিশুসহ তিনজন নিহত ও খুলনা হাসপাতালে নেয়ার সময় আরও একজন মারা গেছে। অপর দুই যাত্রী আহত হয়েছে।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ইফফাত শারমীন বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার তিনজনকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একটি শিশুকে (৫) মৃত অবস্থায় আনা হয়। গুরুতর আহত দুইজনকে আমরা খুলনায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
মিলন রহমান/আরএআর/পিআর