আমার বাসা থেকে রায়হানকে সুস্থ ধরে নেয় পুলিশ : চুলাই লাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৪:২১ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০২০

নগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতারের দাবিতে ৬ষ্ঠ দিনেও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল সিলেট।

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বাদ জুমআ নগরের কোর্ট পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন। বিকেলে রায়হানের বাসার কাছে নেহারীপাড়ায় সিলেটে-সুনামগঞ্জ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে রায়হান হত্যা তদন্তে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।শুক্রবার বিকেলে নগরের কাষ্টঘর এলাকার সুইপার গলির কচুয়া লাল বিজয়ের ছেলে বিল্লু দাশকে জিজ্ঞাসাবাদের করে পিবিআই।

কাষ্টঘর এলাকার সুইপার কলোনীর মৃত দিল মনিলালের ছেলে চুলাই লাল। চুলাই লাল জানান, এর আগে তাকেও ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

চুলাই লাল দাবি করেন, ঘটনার দিনগত রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দরজার শব্দ, তখন ঘুম ভেঙে গেলে দেখি রায়হান নামের একজন যুবক তার বাসায়। জিজ্ঞাসা করলাম কে ভাই আপনি। তখন দেখলাম ছেলেটি স্বাস নিঃশ্বাস নিতে এবং কথা বলতে পারছে না , এসব দেখার মধ্যে পুলিশ হাজির।

পুলিশ বাসায় প্রবেশ করে ও ছিনতাইকারী ওকে নিয়ে চল বলে ধরে নেয়ার চেষ্টা করে।রায়হান যেতে চাইছিল না এবং সে বলেছিল আমি ছিনতাইকারী না।আমিও ভয়ে কিছু বলার মতো সাহস পাচ্ছিলাম না।

sylhet

এরপর ছেলেটিকে পুলিশ সুস্থ অবস্থায় আমার বাসা থেকে নিয়ে যায়। পরের দিন শুনি সে মারা গেছে ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে। একথা শুনে মনটা খুব খারাপ লাগছিল।

তিনি আরও বলেন,  এখানে (কাষ্টঘর) কোনো গণপিটুনি হয়নি। আমি নিশ্চিত, পুলিশ ভালো অবস্থায় তাকে নিয়েছে।

এদিকে, আলোচিত এ ঘটনায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনর্চাজ (সাময়িক বরখাস্ত) এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।তবে তিনি যাতে দেশ ত্যাগ না করতে পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে পিবিআই।

এর আগে গত শনিবার মধ্যরাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে পরিবার। সকালে তিনি মারা যান। নির্যাতন করার সময় এক পুলিশের মুঠোফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকালে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের লাশ শনাক্ত করেন।

মারা যাওয়ার পর রায়হানের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তার হাতের নখও উপড়ানো ছিল। এ ঘটনার পর পুলিশের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতন করে রায়হানকে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে। রায়হানের মৃত্যুর জন্য দায়িত্বহীনতার দায়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় এসএমপির তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে রোববার ভোর ৩টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রায়হানকে আনা হয় বন্দরবাজার ফাঁড়িতে। সেখানে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল সাড়ে ৬টা ৪০ মিনিটে রায়হানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মারা যান তিনি।

নিহত রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারীপাড়া এলাকার তৎকালীন বিডিআরের নায়েক মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। রায়হান নগরের রিকাবীবাজার এলাকার একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন রায়হান। নিহারিপাড়ায় স্ত্রী, ছয় মাস বয়সী মেয়ে, মা ও চাচাকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।

ছামির মাহমুদ/এএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।