পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে শাসালেন সন্ত্রাসী, ভিডিও ভাইরাল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১:০০ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২০

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও দেড় ডজন মামলার আসামি মীর হোসেন মীরু এক পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে শাসিয়েছেন। সাদা পোশাকে থাকা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) এক সদস্যকে আঙুল উঁচিয়ে প্রকাশ্যে শাসানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই পুলিশ সদস্যের নাম আব্দুল মতিন। তিনি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখায় (ডিএসবি) কনস্টেবল হিসেবে ফতুল্লা থানা এলাকায় কর্মরত।

এদিকে মীর হোসেন মীরু নিজেকে ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তার কোনো পদ নেই। কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ আহম্মেদ লিটন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মীরু কুতুবপুর অঞ্চলের অপরাধীদের গডফাদার। তিনি সেক্টর দখল থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে করান। কয়েক বছর আগে প্রতিপক্ষের সঙ্গে গোলাগুলিতে মীরু গুলিবিদ্ধ হন। পরে তার পা কেটে ফেলতে। পা হারিয়েও তার অপরাধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। তিনি কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার (১২ অক্টোবর) ফতুল্লার পাগলা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্ত্রাসী রাজীব তালুকদার ওরফে ভিপি রাজীবের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ওই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মীরু। তার আগে পাগলা নয়ামাটি মুসলিমপাড়া এলাকায় মীরুর লোকজন উশৃঙ্খলতা শুরু করে। সেখানে ডিএসবির কনস্টেবল আব্দুল মতিন তাদের ধমক দেন। বিষয়টি তারা মীরুকে ফোন করে জানান। মানববন্ধনে কনস্টেবল আব্দুল মতিন হাজির হলে উত্তেজিত হয়ে উঠেন মীরু। একপর্যায়ে মীরু আঙুল উঁচিয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মীরুকে উঁচু গলায় বলতে শোনা যায়, ‘আপনি আওয়ামী লীগ করেন? আপনি যুবলীগ করেন? ছাত্রলীগ করেন? আপনি বিএনপি করেন? জাতীয় পার্টি করেন? আপনি কেন পোলাপানরে দৌড়ানি দেবেন?’

ওই পুলিশ সদস্যকে হুমকি দিয়ে মীরু বলেন, ‘এইগুলা কিন্তু ভালো না। পূর্বের ইতিহাস কিন্তু করাইয়েন না। আপনি কেন এইগুলা করবেন? কেন দৌড়ানি দেবেন?’

এ বিষয়ে মীর হোসেন মীরুর কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার একটা হত্যা মামলার আসামিদের পুলিশ দীর্ঘ সাত মাস ধরে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা এলাকাবাসী মিলে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে চেয়েছিলাম। মানববন্ধন শুরুর দিকে সেখানে প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমার লোকজন। তারা মানববন্ধনে যোগদানের উদ্দেশ্যে আসার সময় রড হাতে নিয়ে তাদের দৌড়ানি দেন ডিএসবির সদস্য আব্দুল মতিন। শান্তিপূর্ণ একটা কর্মসূচিতে এমন কাজ কেন করবেন তিনি? এজন্য আমি একটু উত্তেজিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। পরে অবশ্য তিনি সরি বলে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন।

ডিএসবির কনস্টেবল আব্দুল মতিন বলেন, মিরু তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজসহ দেড় ডজন মামলা রয়েছে। পাগলায় মীরুর নেতৃত্বে ভিপি রাজিব হত্যার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে আমি উপস্থিত হওয়ার পর মীরু আমার ওপর উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়। আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। কী কারণে মিরু আমার সঙ্গে এমন আচরণ করলো তা বুঝতে পারিনি।

ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, মীরু কেন একজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে এমন আচরণ করলো তা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মীরুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় হত্যাসহ দেড় ডজন মামলা রয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শফিউল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত করে দেখব। যার দোষ পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

শাহাদাত হোসেন/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।