ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, বরিশালে সরকারি চাল পাচ্ছেন ৪৭ হাজার জেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৮:৫০ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২০

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ইলিশের মোকাম বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এখানে শতাধিক ছোট-বড় মাছের আড়ত আছে। সারা দেশ থেকে পাইকাররা এখানে আসেন। স্বাভাবিক সময়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাছ উঠানো-নামানো ও পরিবহন এবং ক্রেতাদের আনাগোনায় জমজমাট থাকে ইলিশ মোকাম।

তবে এখন উল্টো চিত্র। মোকাম সংলগ্ন খালে বাধা সারি সারি ট্রলার। নেই কর্মব্যস্ততা, নেই ইলিশের ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। জেলে, শ্রমিক আর ফড়িয়ারা বেকার বসে আছেন। আড়তগুলো প্রায় জনশূন্য। কাজ না থাকায় আড়ত ছেড়ে আড্ডা দিয়ে, লুডু খেলে সময় কাটাচ্ছেন অনেকে।

কারণ মা ইলিশকে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে দেয়ার জন্য বুধবার (১৪ অক্টোবর) থেকে আগামী ২২ দিন সাগর ও নদীতে সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ। তাই এখানকার আড়তদার-মহাজন, মৎস্যজীবী ও মোকামের কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন।

ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিন বুধবার ইলিশ মোকাম ছিল জনশূন্য। পোর্ট ইলিশ মোকামে প্রায় ৪০ বছর ধরে শ্রমিকের কাজ করেন মো. হারুন (৫৫)। আড়তে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে তার চার সদস্যের সংসার চলে।

jagonews24

মো. হারুন বলেন, আগামী ২২ দিন বেকার সময় কাটাতে হবে। সরকার নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেদের বিশেষ খাদ্য-সহায়তা দিলেও শ্রমিকদের সহায়তা দেয় না। এজন্য দুশ্চিন্তায় আছি। আগামী ২২ দিন ধারদেনা করে চলতে হবে।

ইলিশ মোকামের দাস ব্রাদার আড়তের শ্রমিক মো. হোসেন সরদার (৫২) বলেন, প্রায় তিন যুগ ধরে মাছের আড়তে কাজ করছি। বছরের এ সময়টা আমার পরিবারের খুব খারাপ কাটে। আমার একার উপার্জনে সংসার চলে। কাজ না থাকায় পরিবারের ছয় সদস্যের দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে অনেক ধারদেনা হয়ে যায়। সরকার যদি এসময় আমাদের একটু সহায়তা করতো তাহলে দুশ্চিন্তা হতো না।

শ্রমিক মো. হোসেন সরদার বলেন, পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে আমার মতো প্রায় তিন হাজার শ্রমিক আছেন। সবার একই অবস্থা। নিষেধাজ্ঞার কারণে কাজ হারিয়ে সবাই বেকার। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি সবাই।

বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের হবিনগর এলাকার বাসিন্দা জেলে মো. খোরশেদ মুন্সি বলেন, ৩০ বছর ধরে নদীতে ইলিশ মাছ ধরছি। গত কয়েক বছর ধরে বছরের এ সময় মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এই সময়টা আমাদের বেকার থাকতে হয়। আগে সর্বোচ্চ ১৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২২ দিন। কিন্তু খাদ্য-সহায়তা বাড়ানো হয়নি। ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার কর্মসূচি সফল করতে শুধু খাদ্য সহায়তা দিলে হবে না, জেলেদের নগদ সহায়তা দিতে হবে।

বরিশাল পোর্ট রোড আড়ৎদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস মনু বলেন, ইলিশের বংশ বিস্তারে সবার নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা উচিত। এবার প্রচুর ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। পোর্ট রোড মোকামে গত এক মাসে গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দু’হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি ছিল। এবার ইলিশের চাহিদাও ভালো ছিল। ভারতে রফতানি হয়েছে। জেলে ও ইলিশ ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছেন।

jagonews24

মৎস্য অধিদফতরের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এ বছর সাগর নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। যার অধিকাংশ বড়। অনুকূল পরিবেশ পেলে ইলিশের ওজন আর সংখ্যা যে বাড়াবে তাতে সন্দেহ নেই। মা-ইলিশের সুরক্ষা ও ডিম পাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারায় এ সফলতা এসেছে। পাশাপাশি আছে সরকারের জাটকা নিধন বন্ধ অভিযান। এই দুই কর্মসূচির সফলতা ইলিশের সংখ্যা বাড়তে বড় ভূমিকা রেখেছে।

ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, মা ইলিশ রক্ষা করে প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন এবং লিফলেট বিতরণ করেছে মৎস্য অধিদফতর।

জেলায় ৭৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ৪৭ হাজার জেলের মাঝে বিতরণের জন্য চাল পাওয়া গেছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে চাল বিতরণ শুরু হবে। কর্মসূচি সফল করতে কর্তৃপক্ষ মৎস্য বিভাগের কমকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মৎস্য বিভাগের অন্য জোন থেকে ২৯ জন কর্মকর্তাকে বরিশাল বিভাগে আনা হয়েছে ২২ দিন দায়িত্ব পালনের জন্য।

সাইফ আমীন/এএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।