‘অগ্নিকন্যা’ আশাকে নিয়ে গর্বিত বাবা-মা

জাহিদ খন্দকার জাহিদ খন্দকার গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৮:২১ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২০

রাজধানীর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে জ্বালাময়ী স্লোগান দেয়া ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত সেই মেয়েটির নাম আসমানী আক্তার আশা। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুরে। ছোটবেলা থেকেই আসমানী আক্তার আশা প্রতিবাদী। শিশু শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বাবার হাত ধরে ছয় বছর বয়সে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। বাবার কাছ থেকে শেখেন প্রতিবাদের ভাষা।

সক্রিয়ভাবে ২০১৩ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে। প্রতিবাদী এমন মেয়েকে নিয়ে গর্বিত আসমানী আক্তার আশার বাবা-মা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার দরিয়াপুরের আসোয়াদ আলীর মেয়ে আসমানী আক্তার আশা। মায়ের নাম রেহেনা বেগম। বাবা-মা গাইবান্ধা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। তারা পেশায় বীমা কর্মী।

jagonews24

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আসমানী আক্তার আশা স্কুলজীবন থেকেই অনেক মেধাবী ও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবার হাত ধরে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন । তখন থেকেই প্রতিবাদী চেতনায় বড় হতে থাকেন।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মধ্যে দিয়ে শুরু করেন রাজনীতি। প্রতিভা বিকাশে যুক্ত ছিলেন গাইবান্ধা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সঙ্গে। স্থানীয় দারিয়াপুরে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর দারিয়াপুর শাখার কমিটি গঠন করে শিল্পী হিসেবে অনেক সফলতা অর্জন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে গাইবান্ধা জেলা শিল্প কলা একাডেমিতে সেলিম আল দীনের ‘বাসন’ নাটকের কইতরির চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে জেলার সংস্কৃতি অঙ্গনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

jagonews24

আসমানী আক্তার আশা গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন। মহিলা কলেজে রাজনীতি করার সুযোগ না থাকলেও ২০১৬ সালে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইসএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

আসমানী আক্তার আশার বাবা আসোয়াদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি ডজন খানেক মামলার আসামি হয়েছি। কখনো ভয় পাইনি। ছয় বছর বয়সে আমার হাত ধরে আমার মেয়ের ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় হয়।

jagonews24

তিনি বলেন, গাইবান্ধার রাজপথে কাজ করতে গিয়ে মেয়ে একাধিকবার জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে পুলিশি হামলার শিকার হয়েছে। মেয়ে শাহবাগে আন্দোলন করায় অনেকেই ভয়ভীতি দেখায়। আমি ভয় করি না। মেয়েকে নিয়ে আমরা গর্বিত।

আশার মা রেহেনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, আমি গর্বিত। আমার মেয়ে আশা আমার মনের আশা পূরণ করেছে। আমার মেয়ের মতো সবার ঘরে প্রতিবাদী মেয়ে জন্ম নিলে এ দেশে আর ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটতো না।

jagonews24

উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর গাইবান্ধার দারিয়াপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার বর্মণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে আশাকে চিনি। তার প্রতিভা ও প্রতিবাদী চিন্তা এই এলাকার মানুষকে মুগ্ধ করেছে। আশার ছোয়ায় এখানকার কোমলমতি শিশুরা সংস্কৃতি বিকাশের সুযোগ পেয়েছে।’

গাইবান্ধা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, গুজবে কান দেবেন না। অনেকেই বলে আসমানী আক্তার আশা অন্য রাজনৈতিক দলের। কিন্তু আশা আমাদের মেয়ে, ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী। তার প্রতিভা ছোটবেলা থেকেই। আশার মতো সব মেয়ে প্রতিবাদী হলে সমাজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না।

jagonews24

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি মিহির ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, আসমানী আক্তার আশাকে আমি নিজের মেয়ের মতো মানুষ করেছি। তার চিন্তা-চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তার পাশে আমরা সব সময় আছি এবং থাকবো।

আলোচিত ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী আসমানী আক্তার আশা জাগো নিউজকে বলেন, আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাবো। আমার একটি হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে, আমি তবুও পিছপা হইনি। আমার দুই হাত দুই পা ভেঙে দিলেও আমি হুইল চেয়ার নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেব।

আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।