পুলিশ ফাঁড়িতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ১১:১০ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২০

সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিন (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। রোববার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মিত্র মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেছেন। ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

রোববার সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিন (৩৪) নামের এক যুবককে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার। তবে ঘটনার প্রথম দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিনতাইকালে নগরের কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন।

পরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় স্থানীয়রা রোববার বিকেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

এছাড়া পুলিশ কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনির কথা বললেও সিলেট সিটি করপোরেশনের সিসি টিভির ফুটেজে ওই এলাকায় এমন কোনো ঘটনার সত্যতা মেলেনি।

নগরের কাষ্টঘর এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই এলাকার পুরোটাই সিসিটিভির ক্যামেরার আওতাভুক্ত। এসব ক্যামেরার মনিটর রয়েছে ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিমের কার্যালয়ে।

রোববার রাতে মুনিমের কার্যালয়ে গিয়ে শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ৭টা পর্যন্ত কাস্টঘর এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়। এসব ফুটেজে কোনো গণপিটুনির দৃশ্য দেখা যায়নি।

সিসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম বলেন, আমাদের সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত কাস্টঘর এলাকার ফুটেজে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি।

প্রসঙ্গত, নিহত রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার মৃত হবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করতেন।

নিহতের পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যেতে বলেছিলেন রায়হান।

তবে পুলিশ বলছে, গণপিটুনিতে আহতাবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোর্তিময় সরকার।

এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। বিক্ষুব্ধরা অভিযোগ করে রায়হানের ‘হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের’ বিচারের দাবি জানান। এ সময় সড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

নিহত রায়হানের মামাতো ভাই আবদুর রহমান বলেন, গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা থেকে বাইরে বের হন রায়হান। এরপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ ছিল না। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে তার রাত ১২-১টা হত। তবে ওই দিন আর বাড়ি ফেরেননি।

‘রোববার ভোর সাড়ে চারটার দিকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তার বাবা (সৎবাবা) মো. রফিকুল ইসলামকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যেতে বলেছিলেন রায়হান।’

তিনি বলেন, আমরা রায়হানের পায়ে একটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখেছি। হাতের কয়েকটি নখ উল্টানো ছিল। তাকে পুলিশই নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি।

একই দাবি করেন রায়হানের মা-বোনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাগজপত্রে দেখা গেছে, রায়হানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। তার মৃত্যু হয় ৭টা ৫০ মিনিটে।

ছামির মাহমুদ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।