৯৮ বছর বয়সেও জোটেনি ভাতার কার্ড

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাগুরা
প্রকাশিত: ১২:০৩ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০২০

অডিও শুনুন

বয়স ৯৮ হলেও এখনও ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে আমেনা খাতুন। শরীরের গঠনও জীর্ণশীর্ণ। কাছ থেকে দেখলেই বোঝা যায়, অনেকটাই ক্লান্ত তিনি। কানে একেবারেই শুনতে পান না। চোখে দেখেন না বললেই চলে। কুজো হয়ে গেছেন। কারও সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না।

হতদরিদ্র বিধবা এই নারী শেষ জীবনে একটু সচ্ছলতার আশায় ধরণা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। চেয়েছেন একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড। আশ্বাস মিললেও এখনো জোটেনি কোনো কার্ড।

এ অবস্থায় হতদরিদ্র ওই নারীকে খেয়ে না-খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আমেনার বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের মৌশা গ্রামে।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রে আমেনার জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৪২ সালের ৬ মে। সে হিসেবে বয়স ৭৮ বছর পেরিয়েছে। অনুমান করে জন্ম তারিখ দেওয়ায় বয়স কমে গেছে। প্রকৃত বয়স আরও অন্তত ২০ বছর বেশি বলে জানা গেছে।

স্বামী লালন শেখ মারা গেছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। পার্শ্ববর্তী ফরিদপুরের বোয়ালমারির বাসিন্দা বড় ছেলে ছিরু শেখ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স (১৯৫০) ৭০ বছর। মা ও বড় ছেলের মধ্যে বয়সের ব্যবধান মাত্র ৮ বছর-যা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, আমেনা খাতুনের বয়স একশ’র উপরে। সহায় সম্পদ বলতে ছিল বাড়ির ভিটেটুকু। সেটিও অন্যের কাছে বিক্রি করে গেছেন লালন শেখ। সংসার জীবনে ছয় ছেলে ও এক মেয়ের মা হন আমেনা। তবে এক মেয়ে ও ছেলে মারা গেছেন। এখন তিনি সেজো ছেলে ইউনুস শেখের বাড়িতে থাকেন।

ছেলে ইউনুস শেখ বলেন, আমার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে আছে। বসত বাড়ির পাঁচ শতাংশ জমি ছাড়া কোনো জমি নাই। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন। ধার-দেনা করে খুব কষ্টে চলছি। এর মধ্যে অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে ওষুধ কিনে খাওয়ানে লাগে। আর কোনো ভাই বোন মার খবর নেয় না।

চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য কতবার গেছি, তার কোনো হিসাব নাই। তিন-চার হাজার টাকা চায়। টাকাও দিতি পারিনি আমার মার কার্ডও হয়নি। সবাই খালি কথা দেয়, কেউ রাখে না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন সর্দার বলেন, তার ওয়ার্ডে বয়স্ক ভাতার যোগ্য নারী-পুরুষ রয়েছেন ১০০-১৫০ জন। সেই তুলনায় বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে খুবই কম।

বালিদিয়া ইউনিয়ন পরিষিদের চেয়ারম্যান পান্নু মোল্যা বলেন, এ ধরনের কোনো বয়স্ক নারী ভাতার জন্য এসেছেন বলে তার মনে পড়ছে না।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী জয়নূর রহমান বলেন, ৯২ বছর বয়সেও হতদরিদ্র ওই বৃদ্ধা বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই নারী যাতে বয়স্ক ভাতা পান, সেজন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।

মহম্মদপুর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ইউএনও আবু সুফিয়ান জানান, বৃদ্ধা যাতে ভাতা পান সেই ব্যবস্থা করা হবে।

মো. আরাফাত হোসেন/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।