নতুন করে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, পানির নিচে কয়েকশ বিঘা জমির ধান
টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে করতোয়া নদীর পানি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সাঘাটা, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তিনটি পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে কয়েকশ বিঘা জমির আমন ধান ও বিভিন্ন ফসল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলাবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের করতোয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টোংড়ারদহ ও সুলতানপুরের দুটি স্থানে প্রায় ৬০ মিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক গ্রাম। পানিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমন ধান, রবিশস্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট। এ উপজেলার মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার চাঁদপুর খলসী গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে পানি প্রবেশ করেছে । পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বগুলাগাড়ী, বিশুবাড়ী, সাতানা বালুপাড়া ও রহলা গ্রাম, হরিরামপুর ইউনিয়নের পার ধুন্দিয়া, পার সোনাইডাঙ্গা ও রাখালবুরুজ গ্রাম এবং তালুককুপুর, শিবপুর, মহিমাগঞ্জ, শালমারা, সাপমারা ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে ।
অপরদিকে বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের দলদলিয়া ও অনন্তপুর গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে সাঘাটা উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার করতোয়া নদীবেষ্টিত তিন উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা জানানো হয়নি।
পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু জানান, বাঁধ ভেঙে এ উপজেলার কিশোরগাড়ী, তেকানী, চকবালা, কাশিয়াবাড়ী, পশ্চিম মির্জাপুর, প্রজাপাড়া, সগুনা, কেশবপুর, পশ্চিম রামচন্দ্রপুর, হাসানখোর, সুলতানপুর বাড়াইপাড়া, মুংলিশপুর ও জাইতর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবার।
উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের দলদলিয়া গ্রামের শ্যামল বর্মন জানান, তার তিন বিঘা জমির আমন ধান বন্যার পানির নিচে। সামনে কীভাবে সংসার চলবে ভেবে পাচ্ছেন না।
সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হাবিবুর রহমান জানান, গাছাবাড়ী মানিকগঞ্জ গ্রামের শত শত বিঘা জমির ফসল বন্যার পানির নিচে। এই ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত না করার কারণে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা আব্দুল মালেক জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ডাক্তার, নার্স, রোগী ও তার স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষদের নৌকা দিয়ে পারাপার হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুয়ায়ী, টানা বৃষ্টি আর নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সাত উপজেলার এক হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ২৫ হেক্টর জমির শাক-সবজি পচে গেছে।
জাহিদ খন্দকার/আরএআর/পিআর