পরিবহন শ্রমিকদের চাঁদার ২ কোটি টাকা সভাপতি-সম্পাদকের পকেটে!
অডিও শুনুন
মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু, অটোরিকশা, মিশুক ও সিএনজি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নং- চট্ট-২৩৫৯) সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিমের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের থেকে চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেট শ্রম আদালতে মামলাও হয়েছে।
মামলার বাদী বিভাগীয় শ্রম দফতর শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম। ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন নাহিদুল ইসলাম।
জেলার ৭টি উপজেলার ১৭ হাজার পরিবহনের শ্রমিকদের থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, শ্রমিক ইউনিয়নের ২০১৮ সালের বার্ষিক রিটার্ন দাখিলের জন্য ২০১৯ সালের ২ জুলাই একটি পত্র দেয় বিভাগীয় শ্রম দফতর। পত্র পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বার্ষিক রিটার্ন শ্রম দফতরে দাখিল করতে বলা হয়। পরে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্যাডে ২০১৮ সালের রিটার্ন দাখিল করা হয়। দাখিলকৃত ২০১৮ সালের আয় ব্যয়ের হিসাব যাচাইয়ের জন্য ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর প্রয়োজনীয় রেকর্ড পত্রসহ শ্রম দফতরে উপস্থিত হওয়ার জন্য ডাকা হয়। পরে আবারও ২ ডিসেম্বর দফতরের আরেকটি স্মারকে অভিযুক্তদের উপস্থিত হওয়ার জন্য তাদেরকে বলা হলে অভিযুক্তরা উপস্থিত হননি।
পরে ২০১৮ সালের দাখিলকৃত বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব যাচাইয়ে সরেজমিন তদন্তের জন্য দফতরের দুই সহকারী পরিচালক মো. সোহেল আজিম ও ইউসুফ আহমদ চৌধুরী চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিমের উপস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করেন। ১৪ জানুয়ারি তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সেই তদন্তে হিসাবের গড়মিল পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে আয় দেখানো হয় ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৫০ টাকা এবং ব্যয় দেখানো হয় ৫১ লাখ ২০ হাজার ১৫০ টাকা। তদন্তকালে আয় এবং খরচের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ তারা হাজির করতে পারেননি যা তদন্তে উঠে আসে।
সেসময় তদন্ত কমটি তদন্তকালে মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় কম-বেশি ৯০টি রোডে কমিটির মাধ্যমে ইউনিয়নের ১৭ হাজার সদস্যের কাছ থেকে প্রতিদিন রশিদ বইয়ের মাধ্যমে ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানতে পারেন। আদায়কৃত ২০ টাকা থেকে ইউনিয়নের জেলা কমিটি ৩ টাকা পায়। সে অনুযায়ী প্রতিদিন জেলা কমিটির আয় প্রায় ৫১ হাজার টাকা যা বছরে ১ কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ইউনিয়নের দাখিলকৃত ২০১৮ সালের রিটার্নে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ প্রদর্শন করা হয়নি। যা অর্থ আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে করে তদন্ত কমিটি।
এছাড়া ইউনিয়নের দাখিলকৃত রিটার্নে সদস্য চাঁদা থেকে বছরে ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৫০ টাকা আয় হয়েছে উল্লেখ করা হলেও উক্ত টাকা ব্যয়ের উপযুক্ত কোনো ভাউচার প্রদর্শন করা হয়নি। ব্যয়ের স্বপক্ষে কোনো রেকর্ডপত্রও সংরক্ষণ করা হয়নি। ১৭ সদস্যের কমিটি কাগজে কলমে থাকলেও ২০১৮ সালের রিটার্নে শুধুমাত্র ইউনিয়নের সভাপতি পাবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম স্বাক্ষরিত।
তদন্তকালে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ব্যাতীত কার্যকরী কমিটির অন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে কমিটি পরিচালিত হয় বলে প্রতিয়মান। ফলে ইউনিয়নের আর্থিক অনিয়মের সকল দায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপরই বর্তায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এই অভিযোগের ব্যাপারে সভাপতি পাবেল মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোনে কয়েকবার রিং হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিমের জানান, যিনি মামলার বাদী তার মামলা করার কোনো এখতিয়াড় নেই। তিনি প্রভাবশালীদের চাপে এই মামলা করেছেন বলে আমাকে ব্যাক্তিগতভাবে জানিয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের কোনো অভিযোগ নেই। সব শ্রমিক আমাদের সঙ্গে।
বিভাগীয় শ্রম দফতর শ্রীমঙ্গলের উপপরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, টাকা আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আমরা মামলা করেছি।
রিপন দে/এফএ/পিআর