পাহাড়ে সোনা ছড়াচ্ছে পাকা ধান
জুম ক্ষেতে উৎপাদিত পাকা ধানের ম ম গন্ধ ছড়াচ্ছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদগুলোতে। সূর্যের মিষ্টি রোদ যখন সেই ধানের ওপর পড়ে তখন মনে হয় সোনা ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ে। বাতাসে দুলছে সোনালি রঙের পাকা ধানের শীষ। অপরদিকে, ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতিও চলছে ব্যাপকভাবে।
ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জুমিয়া পরিবারগুলো। ভোর থেকে জুমের ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জুমিয়ারা। ধান কাটা শেষে জুমঘরেই তা মাড়াই করছে। মাড়াই শেষে থুরংয়ে করে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছে চাষিরা। মৌসুমের শেষ দিকে এখন এমন ব্যস্ততার চিত্রের দেখা মিলছে পার্বত্য খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জনপদে।
মে-জুন মাসের দিকে পাহাড়ে জুম চাষ আরম্ভ করেন জুমিয়ারা। প্রায় তিন-চার মাস পর সেপ্টেম্বর থেকে পাহাড়ে পাহাড়ে জুমের ধান কাটার উৎসব শুরু হয় জুমিয়াদের।
অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পাহাড়ে জুমের ভালো ফলন হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন জুম চাষিরা। ধান ছাড়াও জুমে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ হয়েছে। জুমে উৎপাদিত খাদ্য শস্য দিয়েই সংসার চলে জুমিয়াদের। বছরের ৬-৮ মাস খাবারের যোগান হয় জুমে উৎপাদিত ধান।
মাটিরাঙ্গার গোমতি এলাকার জুমচাষি অনন্ত ত্রিপুরা জানান, বিভিন্ন সবজির সঙ্গে জুমে ধান চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জুমে ভালো ফলনও হয়েছে। পর্যাপ্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারলে ফলন আরও ভালো হতো বলেও মনে করেন দুর্গম এলাকার এ জুমচাষি।
দীঘিনালার সীমানাপাড়া এলাকার জুমচাষি সাবেক ইউপি সদস্য হতেন ত্রিপুরা জানান, বছরের পর বছর জুমচাষ করলেও সার, বীজ ও কীটনাশকসহ কোনো ধরনের সরকারি প্রণোদনা পায় না জুমচাষিরা। সরকারিভাবে সহযোগিতা পাওয়া গেলে জুমের উৎপাদন আরও বাড়তো বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মুর্ত্তুজা আলী জানান, জুমে উৎপাদিত ফসল এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু আদি পদ্ধতিতে জুম চাষের কারণে পাহাড়ে ক্ষয় সৃষ্টি এবং জমির ঊর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। তাই আমরা জুমচাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষের জন্য উৎসাহিত করি। এতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে। খাগড়াছড়িতে চলতি বছর দুই হাজার হেক্টরেরও বেশি পাহাড়ি ভূমি জুমচাষের আওতায় এসেছে।
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এমএএস/পিআর