পদ পেতে বাবা-মা পাল্টে ফেললেন ছাত্রদল নেতা!
জাল সনদ, বিবাহিত এবং বির্তকিতদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রদলসহ জেলার ৩২টি ইউনিট কমিটি। এর মধ্যে সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের নাগরিক সনদ ও একাডেমিক সনদের সঙ্গে নিজের ও বাবা-মা কারো নামেরই কোনো মিল নেই। অভিযোগ উঠেছে দলীয় পদ পেতে তিনি সনদগুলো জাল করেছেন।
এমন অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ছাত্রদলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। আর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বলছে জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলাসহ সিলেট জেলা ছাত্রদলের আধীন ৩২টি ইউনিট কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা ছাত্রদল। এর একদিন পর জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটি প্রকাশের পরদিন অর্থাৎ ১০ সেপ্টেম্বর গোলাপগঞ্জ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন।
তাদের বক্তব্য, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ফাহিম চৌধুরী ৮ম শ্রেণি পাস করেছেন। জাল সনদের মাধ্যমে জেলা ছাত্রদল তাকে পদায়ন করেছে। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমানও লেখাপড়া করেছেন মাত্র ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত। জেলা ছাত্রদল প্রেরিত সাংগঠনিক টিমের কাছে তারা দুজন কোনো একাডেমিক সনদ জমা দেননি। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সুজন বিবাহিত লোক।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর এসব অভিযোগ উল্লেখ করে উপজেলা ছাত্রদলের জাহেদ আহমদ, দিদারুল ইসলাম, দুলাল আহমদ ও মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক, ৮ জন যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২ জন সদস্য মিলে কমিটির ১২ জন নেতা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
অভিযোগে বলা হয়, কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব মতিউর রহমান মুমিন ওই কলেজের কোনো ছাত্র নয়। কলেজের অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রত্যায়নপত্রও সংযুক্তি আকারে জমা দেয়া হয়েছে ঢাকায়।
গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার উপজেলার সাংগঠনিক টিমের প্রধান জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাশরুর রাসেল বলেন, মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিধি সভা করে ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মতামত নিয়েই আমরা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব দিয়েছিলাম জাহেদ আহমদ মান্নাকে। আমাদের প্রস্তাবিত কমিটিকে পাশ কাটিয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন নাদিম তাদের পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে সিলেট ছাত্রদলকে ধ্বংস করা হয়েছে।
এমন অভিযোগ ছাত্রদলের আরও বেশ কয়েকজন সাংগঠনিক টিমের নেতাদের। তাদের বক্তব্য, সিলেটের কোথাও টিমের প্রাস্তাবিতদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়নি।
সবচেয়ে বড় প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠনে। আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সভাপতির অত্যন্ত ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আবু সাঈদ মো. শাহিনকে। কিন্তু এতে রয়েছে ভয়ঙ্কর প্রতারণা ও জালায়াতি। সদর উপজেলার খাদিম নগরের উমাদপাড়া গ্রামের ভোটার তালিকায় সিরিয়াল ৯৭ নম্বরে এ দেখা গেছে আবু সাঈদ শাহিনের নাম। তালিকায় শাহিনের বাবার নাম মো. আব্দুল হাসিম ও মায়ের নাম মোছা. নেহার বেগম। এছাড়া পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বেসরকারি চাকরিজীবী ও জন্ম তারিখ ১৫/১০/১৯৮৯।
কিন্তু সদর উপজেলা ছাত্রদলের কমিটিতে তার নাম এসেছে মো. শাহিন আহমদ হিসেবে। ছাত্রদলের নেতাদের কাছে শাহিনের দেয়া সনদপত্রে দেখা গেছে, তার নাম মো. শাহিন আহমদ, বাবার নাম আকবর আলী ও মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। এসএসসি পাস করেছেন ২০০৫ সালে। ভোটার আইডি ও স্কুলের সনদের সঙ্গে নিজের নাম, মা-বাবা কারও নামের কোনো মিল নেই।
স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলার সভাপতি সুমন নিজের লোকদের কমিটিতে পদায়ন করতে এসব জালিয়াতিতে জড়িত। এমন ঘটনায় সিলেট-১ আসনে বিগত জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে সমালোচিত করা হয়েছে। এজন্য খাদিমপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকদিন মিছিল সমাবেশ করেছে।
তবে জালিয়াতির অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহিন বলেন, আমার সকল কিছু যাচাই-বাছাই করে সংগঠন আমাকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দিয়েছে।
ভোটার আইডি ও সনদের নামের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের এই আহ্বায়ক বলেন, আমি অসুস্থ।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি ও সিলেট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ওমর ফারুক কাওসার বলেন, সিলেট সদর উপজেলার আহ্বায়ক আমাদের কাছে যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন এতে তার নাম মো. শাহিন আহমদ রয়েছে। কমিটি দেয়ার পর আমরা জেনেছি সে সবকিছু জালিয়াতি করেছে। এটা তার আসল নাম নয়।
তিনি বলেন, মানুষ পদের জন্য যে নিজের মা-বাবার নাম বদলাতে পারে সেটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এ বিষয়ে আরও তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
ছামির মাহমুদ/এফএ/পিআর