হাসপাতালে কিশোরী ধর্ষণ : তদন্তে মিলেছে ওয়ার্ড বয়ের নাম

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:৩৫ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়কে অভিযুক্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর জ্বর ও শরীরে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের তিন তলায় নারী ওয়ার্ডে ভর্তি হয় ওই কিশোরী (১৬)। সে ধীরে ধীরে অনেকটাই সুষ্ঠ হয়ে ওঠে। ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ওই ওয়ার্ডে দায়িত্ব ছিলেন ওয়ার্ড বয় মাজিদুল। ওই রাতে হাসপাতালের শয্যায় ঘুমিয়ে পড়েন কিশোরীর মা। কিন্তু কিশোরী জেগে ছিল। এ সময় মাজিদুল ওই কিশোরীকে ফুঁসলিয়ে হাসপাতালের নিচ তলায় নিয়ে যান। সেখানে হাসপাতালের একটি কক্ষে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে বারান্দায় ফেলে তিনি পালিয়ে যান। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে রাতেই কিশোরীকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে কিশোরীর ভর্তি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ১২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সকালে ১৬ বছরের কিশোরীকে হাসপাতালের পাঁচতলার নারী ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওই কিশোরীর শারীরিক সমস্যার কারণে স্পর্শকাতর স্থানে সেলাই দেয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন। প্রথমদিকে এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এক সপ্তাহ পর ঘটনা জানাজানি হওয়ায় গত শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সাটুরিয়া হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সাদিককে কমিটির প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ড বয় মাজিদুলকে বাঁচানোর জন্য বিয়ের নাটক সাজিয়ে ৯ দিন সময় পার করেছে গোপনে। কিন্তু স্থানীয়দের চাপে অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে সাটুরিয়া থানার ওসি মো. মতিয়ার মিঞা বলেন, মেয়েটি বা তার পরিবার থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। মা ও মেয়েকে থানায় আনা হলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে তারা জানান। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) ওয়ার্ড বয় মাজিদুল করিম ৬ লাখ টাকা কাবিননামা করে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেছেন। তবে মাজিদুলের আগেও স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার মধ্যস্থতায় ঘটনা ধামাচাপা দিতেই এই বিয়ে সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। এ কারণে মেয়েটির পরিবারও ধর্ষণের ঘটনা এখন অস্বীকার করছেন।

এরপর থেকেই মাজিদুল হাসপাতালে অনুপস্থিত রয়েছেন। কৌশলে সরিয়ে রাখা হয়েছে নির্যাতিত কিশোরীকেও। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় মাজিদুলকে শোকজও করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে এবং সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তবে ওই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন কোনো অভিযোগ তাদের কাছে করেনি। সাংবাদিকদের কাছে ঘটনা শুনেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ওয়ার্ড বয় মাজিদুলের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। তাই হাসপাতালের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

মাজিদুলের সঙ্গে ওই কিশোরীর বিয়ে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।