স্বামীর মৃত্যুর ৫০ বছর পর বিধবা ভাতা পেলেন মাজু বিবি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাগুরা
প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

বয়স ৯০ বছর। স্বামী মারা গেছেন ৫০ বছর আগে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সরকারের ঘোষণা ও নীতিমালা অনুযায়ী মাজু বিবি বয়ষ্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার দাবিদার। অথচ ৪০ বছর ধরে চেষ্টা করেও কোনো ভাতা পাননি তিনি। অনেকের পেছনে ঘুরেছেন ভাতার জন্য। সবার একই কথা ভাতার কার্ড পেতে টাকা দিতে হবে। একটা সময় মাজু বিবিও হাল ছেড়ে দেন।

অবশেষে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. জয়নুর রহমানের উদ্যোগে তিনি একটি বিধবা ভাতার কার্ড হাতে পেয়েছেন। চলতি মাসে ৬ হাজার টাকাও তুলেছেন তিনি। জীবন সায়াহ্নে এসে ভাতা পাওয়ায় মাজু বিবির চোখ থেকে ঝরে পড়ে আনন্দ অশ্রু। মাজু বিবির বাড়ি উপজেলার দীঘা ইউনিয়নের শির গ্রামে। তিনি মৃত জব্বার মোল্যার স্ত্রী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাজু বিবি জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। পায়ের দুটি পাতা মোড়ানো। জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ৮৩ বছর। বাস্তবে বয়স ৯০ এর উপরে বলে জানান প্রতিবেশীরা। স্বামী মারা গেছেন ৫০ বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর অন্যের বাড়িতে পেটে-ভাতে কাজ করে দিন চালাতেন। বয়সের কারেণ এখন আর কাজ করতে পারেন না। একমাত্র ছেলে দিদার মোল্যার উপর নির্ভরশীল। দিদার পরের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করে মা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালান। সম্পত্তি বলতে চার শতাংশ জমির উপর একটি টিনের ঘর রয়েছে তাদের। সেখানেই বসবাস।

স্থানীয় বাসিন্দা কবি আকাহিদ হোসেন মাজু বিবির বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জয়নুর রহমানের নজরে আনেন। তাৎক্ষণিক তারা ভাতার ব্যবস্থা করে দেন।

তিনি জানান, মাজু বিবি ভাতা পাওয়ার যোগ্য পাওনাদার। তার মতো অসহায় একজনের জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছে।

মাজু বিবির পুত্রবধূ তহমিনা (৪০) জানান, আগে অনেকেই কার্ড করে দিতে চেয়েছেন কিন্তু বিনিময়ে টাকা চেয়েছেন। টাকা দিতে না পারায় কোনো সরকারি সুবিধা আমরা পাইনি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জয়নুর রহমান বলেন, মাজু বিবির আবেদনের তালিকা যখন আমার হাতে আসে তখন অবাক হয়েছিলাম। শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিধবা, এমনকি বয়স্ক ভাতা যেকোনো একটি তার অনেক আগেই পাওয়ার কথা ছিল। অবশেষে আমরা কার্ডটি করে দিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলার দরিদ্র মানুষের সঠিক পাওনাটা বুঝিয়ে দিতে সকল দফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। সরকারের দেয়া সকল সুবিধা সুন্দরভাবে মানুষকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছি। যদি কেউ বাদ পড়ে থাকে তাহলে তারা সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করে সুবিধা প্রদান করা হবে।

আরাফাত হোসেন/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।