একমাত্র মেয়ের কবরের পাশে অনশনে বাবা
একমাত্র মেয়েকে বিসিএস ক্যাডার বানানোর স্বপ্ন দেখে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে ঢাকায় ট্রাকচালকের চাকরি নেন আবুল কামাল কালু। স্বপ্ন পূরণে দিন-রাত কাজ করতেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ খবর আসে মেয়ে আর নেই। ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। মেয়েহারা বাবার কান্নায় ভারি ওঠে ভোলার বোরহানউদ্দিনের রামকেশব গ্রামের বাতাস। মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে এখন মেয়ের কবরের পাশেই অনশনে বসেছেন এই বাবা।
জানা গেছে, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নের চর গঙ্গাপুর দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ছিল আবুল কামাল কালুর একমাত্র মেয়ে ফারজানা আক্তার। গ্রামের বাড়িতে দাদির কাছে থাকত ফারজানা। গরিব আবুল কালাম কালুর স্বপ্ন ছিল মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে বিসিএস ক্যাডার বানানোর। আর তাই গ্রামের বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে ট্রাকচালকের কাজ নেন।
গত ২৯ আগস্ট সকালে মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে আসেন গ্রামের বাড়িতে। পরদিন বোরহানউদ্দিন থানায় ৭ জনকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। এ ঘটনায় মো. মাইনুউদ্দিন (৫৫) নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনার ১৭ দিনেও গ্রেফতার হয়নি মামলার প্রধান আসামি মো. মিরাজ হোসেন কামালসহ মিনারা বেগম, ইউসুফ, নিরু বেগম, মো. কুদ্দুস ও মহিউদ্দিন নামে বাকি আসামিরা। তাই মামলার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে মেয়ের কবরের পাশে অনশনে বসেছেন আবুল কালাম কালু।
আবুল কালাম কালু জানান, মেয়ের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। মাদকাসক্ত বখাটে মিরাজ, তার বাবা ইউসুফ ও মা মিনারাসহ মামলার আাসমিরা ফারজানাকে প্রতিনিয়ত চরিত্রহীন অপবাদ দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ায় সে আত্মহত্যা করেছে। মামলার প্রধান আসামিসহ সকল আসামি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তিনি মেয়ের কবরের পাশে অনশন করবেন।
স্থানীয় আব্দুল জলিল জানান, জানুয়ারি থেকে মাদরাসায় যাওয়া-আসার পথে ফারজানাকে উত্ত্যক্ত করত মাদকাসক্ত মো. মিরাজ হোসেন কামাল। ফারজানার পরিবার আমাদেরকে জানালে স্থানীয়ভাবে আমরা এলাকার কয়েকজন দুই দফা সালিশ করলেও বন্ধ হয়নি উত্ত্যক্ত। উল্টো মিরাজের বাবা-মা ছেলের অপরাধ ঢাকতে ফারজানাকে চরিত্রহীন অপবাদ দিত।
ফারজানার দাদি জুলেখা বিবি জানান, স্থানীয়ভাবে সালিশ বসানোর জন্য বখাটে মিরাজ হোসেন কামাল, তার বাবা ইউনুফ ও মা মিনারা বেগমনহ আসামিরা চরিত্রহীন অপবাদ দিয়ে বাড়িতে এসে ফারজানা ও আমাকে নির্যাতন করত। ২৯ আগস্টও তারা আমাদের ঘরে এসে ফারজানার উপর নির্যাতন চালায়। এ সময় আমি বাধা দিতে আসলে আমাকেও নির্যাতন করে। এতে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। জ্ঞান ফিরলে ফারজানার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই।
গৃহবধূ বিনু বেগম জানান, গত ২৯ আগস্ট সকালেও ফারজানা ও তার দাদিকে ঘরে একা পেয়ে নির্যাতন করে মিরাজ ও তার বাবা-মাসহ আসামিরা। এ সময় আমি তাদের বাধা দিতে গেলে আমাকে হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয় তারা। প্রায় ৩০ মিনিট পর আমি ফারজানাদের ঘরে ২-৩ জনকে নিয়ে গিয়ে দেখি জুলেখা বিবি খাটের ওপর বসে রক্তাক্ত অবস্থায় কাঁদছেন ও ফারজানার ঝুলন্ত লাশ।
চর গঙ্গাপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন জানান, ফারজানা আমাদের মাদরাসার মেধাবী ছাত্রী ছিল। তার আত্মহত্যার মূল রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এদিকে ফারজানার মৃত্যুর পর পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা পলাতক রয়েছে।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মাদরাসা ছাত্রী ফারজানার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যা এসেছে। তবে আমরা আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা অধিক গুরুত্ব দিয়ে গোয়েন্দা নিয়োগ করা করেছি। পলাতক আসামিরা দ্রুত গ্রেফতার হবে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এফএ/জেআইএম