যে কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। এ অবস্থায় সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দেশের কোনো বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেনি ভারতীয় পেঁয়াজ।
রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পরপরই বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক। একই অবস্থা ভোমরা ও হিলি বন্দরেও। সকাল থেকে এসব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসেনি। তবে একই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হয়েছে ১২ মেট্রিক টন ইলিশ। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এক হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির প্রথম চালান এটি।
বিকেলে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। সোমবার সকাল থেকে ভারতীয় কোনো পেঁয়াজের ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করেনি। পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ব্যাপারে লিখিতভাবে কোনো কিছু জানায়নি ভারত। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় তারা।
একই দিন বেনাপোল দিয়েও বাংলাদেশে আসেনি কোনো পেঁয়াজের ট্রাক। পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করায় বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক। একই অবস্থা হিলি স্থলবন্দরেও। তবে সন্ধ্যায় বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ইলিশের প্রথম চালান। সে হিসেবে আমদানিকারকরা বলছেন, ইলিশ পাঠানোর দিন পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত।
ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার রফতানির বিষয়ে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হওয়ায় পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করা হয়েছে।
হঠাৎ করে বাংলাদেশে কেন পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সে বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, পেঁয়াজ রফতানির বিষয়ে ভারতের আগের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য আগের দামে পেঁয়াজ রফতানি করবে না তারা।
পেট্রাপোল রফতানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির কার্তিক ঘোষ বলেন, রফতানিকারক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৭৫০ মার্কিন ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে না। সে কারণে অনেকগুলো পেঁয়াজভর্তি ট্রাক বর্ডারে দাঁড়িয়ে আছে।
বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় রফতানিকারকরা স্থানীয় বাজার দর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি করবে না। এজন্য পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।
ভারতের বনগাঁ এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী অনিল মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করতে আমাদের আপত্তি নেই। বাজারদরে এলসি পেলে পুনরায় রফতানি শুরু হবে। সেক্ষেত্রে পুরোনো যেসব এলসি দেয়া আছে সেগুলো ২৫০ মার্কিন ডলার সংশোধন করে সংশোধিত মূল্যে এবং নতুন এলসি ৭৫০ মার্কিন ডলার করা হলে পেঁয়াজ রফতানি শুরু হবে।
এদিকে হিলি স্থলবন্দর সূত্র জানিয়েছে, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়ায় নিজ দেশের বাজার ঠিক রাখতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে ভারত। হিলির কাস্টম কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শংকর দাস এ তথ্য জানিয়েছেন।
শংকর দাস বলেন, ভারতের যেসব অঞ্চলে পেঁয়াজ উৎপাদন হতো অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে সেখানে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। নিজ দেশে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের কথা সোমবার হিলি কাস্টমকে জানিয়েছে ভারত।
এ অবস্থায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সোমবার থেকে সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ থাকবে। এ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন এখনও জারি হয়নি। তবে অচিরেই জারি হবে। একই সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যেসব এলসি খোলা রয়েছে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোর বিপরীতেও কোনো পেঁয়াজ রফতানি হবে না।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় রফতানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমাদের জানিয়েছে, ভারত পেঁয়াজ রফতানি করবে না। ভারত সরকার নাকি কাস্টমকে নিষেধ করেছে পেঁয়াজ রফতানি না করতে। এদিকে আমাদের অনেক আমদানিকারকের বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলা রয়েছে। আমরা তো এখন ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেছি। আমরা তাদের বলেছি আমাদের যেসব এলসি খোলা রয়েছে সেগুলোর পেঁয়াজ রফতানি করতে। কিন্তু তারা সেগুলোরও পেঁয়াজ রফতানি হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ভারত কোনো ঘোষণা ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। পারস্পরিক বাণিজ্যে সমঝোতার বিকল্প নেই। তারা রফতানি বন্ধ না করে পেঁয়াজের আমদানিকারকদের সময় বেঁধে দিতে পারতেন। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি।
এমদাদুল হক মিলন/এএম/এমএস