থমকে আছে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ

আজিজুল সঞ্চয়
আজিজুল সঞ্চয় আজিজুল সঞ্চয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ১০:০২ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

অডিও শুনুন

মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে ঝিমিয়ে পড়েছে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলওয়ে লিংক (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্পের কাজ। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর প্রথম দফায় বাড়ানো সময়ও ফুরিয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ অগ্রগতি নেই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের। করোনাভাইরাসের কারণে সব শ্রমিকও ঠিকমতো কাজে আসছেন না। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে কিনা সেটি নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলওয়ে লিংক (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প কাজের জন্য ২০১৮ সালের ২১ মে ভারতের নতুন দিল্লির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যায় ধরা হয় ২৪০ কোটি ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ৫০১ টাকা।

ভূমি অধিগ্রহণসহ সকল জটিলতা কাটিয়ে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ১৮ মাস মেয়াদী এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মোট সাড়ে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের সাড়ে ছয় কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ অংশে। আর বাকি চার কিলোমিটার রেলপথ ভারতের অংশে। রেলপথটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর সীমান্ত পর্যন্ত যাবে। ভারত সরকারের অনুদানের অর্থে নির্মিত হচ্ছে এই রেলপথ।

B-baria-Rail0

চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় চলতি বছরের ১৩ মে পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজ করতে না পারায় সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়। তবে প্রথম দফায় বৃদ্ধিকৃত সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস হানা দেয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চ মাসের শেষভাগ থেকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধের পর গত ১ জুন থেকে পুনরায় কাজ শুরু হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখনও সব শ্রমিকরা নিয়মিত কাজে আসছেন না। এর ফলে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে লকডাউনের কারণে প্রকল্প কাজের অনেক স্টাফ ভারতে চলে যান। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কনসালটেন্টসহ বেশ কয়েকজন স্টাফ বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। এতে করে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আখাউড়া-আরগতলা ডুয়েলগেজ রেলওয়ে লিংক (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প কাজের অগ্রগতি মাত্র ১০ শতাংশ বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

B-baria-Rail0

গত ৯ আগস্ট সরেজমিন গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনের পাশে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া রেলপথে পড়া ১৬টি সেতু ও কালভার্টের মধ্যে মাত্র কয়েকটির কাজ করেছেন শ্রমিকরা। আর রেললাইন বসানোর জন্য অধিগ্রহণকৃত জায়গায় মাটি ফেলার কাজ করেছেন স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক।

প্রকল্প কাজের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমের কারণেও কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এর ফলে সেতু ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস সময় লেগে যাবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ভাস্কর বকশি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর আমাদের বেশ কয়েকজন স্টাফ ভারতে চলে যান। এদের কেউ কেউ ফিরে এলেও ভিসা জটিলতায় কয়েজন কনসালটেন্টসহ ১০-১৫ জন স্টাফ এখনও বাংলাদেশে আসতে পারেননি। তাদেরকে নিয়ে আসার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা করছি।

B-baria-Rail0

‘করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাস কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমের কারণেও কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি বর্ধিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে’ যোগ করেন ভাস্কর বকশি।

এ ব্যাপারে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলওয়ে লিংক (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, প্রকল্প কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান-কনসালটেন্ট সবই ভারতের। নির্মাণসামগ্রীও আসে ভারত থেকে। এখন করোনাভাইরাসের কারণে কাস্টমস-ইমিগ্রেশন সবকিছু বন্ধ রয়েছে। অনেক স্টাফ ভারত থেকে আসতে পারছেন না। এতে করে প্রভাব পড়ছে প্রকল্পের কাজে। সবকিছু বিবেচনা করে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।