শিক্ষক বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবে ছাত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৩:১৩ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাইস্কুলে পড়ার সময় প্রাইভেট পড়তে গিয়ে শিক্ষক কাইয়ুমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেয়েটির। এখন তিনি কলেজে পড়েন। এর মধ্যে তার অন্য এক জায়গায় বিয়েও হয়েছিল। কিন্তু পুরনো প্রেমের টানে স্বামীকে তালাক দিয়ে ছুটে আসেন প্রেমিক স্কুলশিক্ষকের কাছে। কথা ছিল তাদের বিয়ে হবে। কিন্তু এরই মধ্যে আরেক নারীকে বিয়ে করে বসেন স্কুলশিক্ষক কাইয়ুম। এ অবস্থায় প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেন ওই কলেজ ছাত্রী। হাতে নেন কীটনাশকের বোতল। বিয়ে ছাড়া কিছুতেই ফিরবেন না তিনি।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছেন ওই কলেজ ছাত্রী। কিন্তু প্রেমিকার আসার খবরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন এমএ কাইয়ুম। প্রেমিক কাইয়ুম বিয়ে না করলে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন ওই প্রেমিকা। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের চরটেকিয়া গ্রামের মো. আহাদ মিয়ার মেয়ে ও পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ঝুমা আক্তার। চরতেরটেকিয়া মৌজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় একই স্কুলের শিক্ষক এমএ কাইয়ুমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিন বছর আগে ঝুমাকে অন্যত্র বিয়ে দেয় তার পরিবার। কিন্তু বিয়ের পরও কাইয়ুম মেয়েটির সঙ্গে মোবাইলে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে স্বামীর সংসার ফেলে বাবার বাড়িতে চলে আসেন ঝুমা।

স্বজনদের অভিযোগ, বিয়ের প্রলোভন দেখিতে গত ২ সেপ্টেম্বর মেয়েটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন কাইয়ুম। পরদিন কাইয়ুমের সঙ্গে ঝুমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তবে এদিন অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করেন কাইয়ুম। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত রোববার থেকে কাইয়ুমের বাড়িতে এসে অবস্থান নেয় ঝুমা।

অভিযুক্ত এমএ কাইয়ুম চরতেরটেকিয়া গ্রামের নূরুজ্জামানের ছেলে। তিনি চরতেরটেকিয়া মৌজা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষন বিষয়ের শিক্ষক।

ঝুমার দাবি, ‘তার শিক্ষক কাইয়ুমের সঙ্গে ১০ বছর ধরে সম্পর্ক। তাদের মধ্যে বহুবার শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে। বিয়ের পরও কাইয়ুমের সাথে তার যোগাযোগ ছিল।’

তিনি বলেন, ‘কাইয়ুমের কথামতোই তার বাড়িতে এসেছি বিয়ের জন্য। কিন্তু সে প্রতারণা করে পালিয়ে গেছে। সে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত এ বাড়িতেই থাকব। আমারতো আর কোথাও যাওয়ার নেই। প্রয়োজনে আত্মহত্যা করব।’

ঘটনার পর থেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন কাইয়ুম। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করলেও তাকে ঘরে আনা সম্ভব নয় বলে জানান, কাইয়ুমের মা ও বোন।

কাইয়ুমের মা জানান, ‘তার সঙ্গে সম্পর্ক আছে, এটা ঠিক। কিন্তু এখন তার ছেলে অন্য জায়গায় বিয়ে করে ফেলেছে। এ অবস্থায় মেয়েটি বাড়িতে এসে বসে থাকায় আমরা বিপাকে পড়েছি।’

মেয়েটিকে আইনি সহায়তাসহ নিরাপদ হেফাজতে নিতে প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ নেয়া হলেও বিয়ে ছাড়া কাইয়ুমের বাড়ি ছাড়তে নারাজ ঝুমা।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দত্ত জানান, আমরা মেয়েটিকে বুঝিয়ে হেফাজতে নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু সে কিছুতেই প্রেমিকের বাড়ি ছাড়তে রাজি না। হাতে কিটনাশকের বোতল নিয়ে বসে আছে। জোর করলেই আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমরা তাকে সব সময় আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।

এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক মো. শ্যামল মিয়া জানান, মেয়েটির বাবা থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। কিন্তু এতে কিছু ত্রুটি আছে। তাই এটি সংশোধন করে মামলা রুজুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। মেয়েটির নিরাপত্তার দিকটিও দেখছে পুলিশ।

নূর মোহাম্মদ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।