তিলে তিলে মানুষ করা দুই ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
মৃত সাব্বির ও জুবায়ের

পারুল বেগমের স্বামী নেই। ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে টিউশনি করেন তিনি। প্রতিবেশীদের ছেলে-মেয়েদের আরবি শেখান পারুল। তিনজন ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার লক্ষ্য নিয়ে এই জীবনযুদ্ধে নেমেছেন। বহু কষ্ট করে নিজের সংসার সাজিয়েছেন। স্বামীর অবর্তমানে দুই ছেলেকে কলেজে ভর্তি করেছেন।

কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে একসঙ্গে তার দুই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। দুই ছেলেকে হারিয়ে মা পারুল বেগম এখন পাগলপ্রায়। শনিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার নূরজাহান বেগমের বাসায় গেলে এসব তথ্য জানা যায়। নূরজাহান বেগমের বাসার ভাড়াটিয়া পারুল বেগম।

পারুল বেগমের প্রতিবেশী স্মৃতি আক্তার বলেন, পারুল আমার খালা হন। এক বাড়িতে বসবাস করি। পারুল খালার স্বামী নুরুউদ্দিন নেই। তার তিন ছেলের মধ্যে সাব্বির (২১) নারায়ণগঞ্জ কলেজে বিবিএতে পড়াশোনা করে। জুবায়ের (১৮) নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে লেখাপড়া করে। ছোট ছেলে ইয়াছিন স্কুলে পড়াশোনা করে। পারুল খালা বিভিন্ন জনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের আরবি শেখান। পাশাপাশি অন্যের ছেলে-মেয়েদের আরবি পড়ান। এই দিয়ে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালান। সেই সঙ্গে তিন ছেলেকে মানুষ করার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় সাব্বির ও জুবায়ের একসঙ্গে মারা যায়। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ইয়াছিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মা সংজ্ঞাহীন। তাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সাব্বির ও জুবায়েরের লাশ এলে দাফন করা হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শাহাদাত হোসেন/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।