সবজি বাজারে আগুন, ভরসা কেবল ডাল-ডিম
বন্যায় কুড়িগ্রামের সবজির আবাদ একেবারে বিনষ্ট হওয়ায় বাজারগুলোতে জেলার বাইরে থেকে আসছে সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। এসব সবজির দাম আকাশছোঁয়া। বেশি দামের সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে নাভীশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের।
একদিকে করোনার প্রভাবে কর্মহীন মানুষ অন্যদিকে বন্যায় সবজিতে ব্যাপক ক্ষতি। সব মিলিয়ে কাঁচাবাজারের লাগামহীন মূল্যে নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত। সবজি কেনা এখন দুরহ ব্যাপার। তাই ডাল আর ডিমের ওপরই ভরাসা প্রত্যন্ত এলাকার খেটে খাওয়া পরিবারগুলোর।
বন্যা শুরুর পর থেকেই সবজির বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। কিন্তু গেল দু’সপ্তাহ ধরে সবজির দাম লাগামহীন হয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রতিটি সবজি কেজি প্রতি দুই থেকে চারগুণ দামে কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচামরিচ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, পিঁয়াজ-৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ছোট করলা ১২০ টাকা, বড় করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মূলা এবং লাল শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও কলমির শাক ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতিপিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আবার চালের দামও বেড়েছে প্রকারভেদে কেজি প্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা।
বাজার করতে আসা প্রভাষক আতাউর রহমান জানান, বাজারগুলোতে সবধরনের সবজির সরবরাহ নেই। যা আছে সেগুলোর দাম চারগুণ বেশি। আগে এক কেজি কিনলে এখন কিনতে হচ্ছে এক পোয়া।
ক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষের পক্ষে এখন সবজি কিনে খাওয়া স্বপ্নের ব্যাপার। তাই ডিম ডালে দিন চলে যাচ্ছে।
গৃহিণী ঝরণা রানী জানান, আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি দিয়ে সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় পার করতে হচ্ছে। সবজির বাজারে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আর কাঁচামরিচ কিনে খাওয়ার কথা যেন চিন্তাই করা যায় না।
সবজি বিক্রেতা আব্দুল জলিল জানান, বন্যায় কুড়িগ্রামের অধিকাংশ সবজির আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জেলার বাইরে থেকে সবজি আনতে হচ্ছে। ফলে দাম একটু বেশি।
সবজি চাষি মমিনুর রহমান জানান, এক বিঘা উঁচু জমিতে লাউ, করলা আবাদ করেছিলাম। বন্যার পানিতে না ডুবলেও বৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এতে করলা নষ্ট হয়ে গেছে। লাউয়ের ফলন কিছুটা হলেও আসল মূলধন উঠবে না। বর্তমানে তিনি প্রতি পিস লাউ খেত থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।
কুড়িগ্রামের কচাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল জানান, এবারের বন্যায় তার ইউনিয়নের ৯৫ ভাগ সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাইরে থেকে সবজি আনছেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলোর দাম চড়া হওয়ায় সর্বস্তরের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রান্তিক চাষিদের জন্য সরকারের বিশেষ প্রণোদনা দাবি করেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৭ হাজার হেক্টর বিভিন্ন ফসলি জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার কৃষক। সরকারিভাবে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি টাকা।
নাজমুল হোসেন/এফএ/পিআর