ছেলে হত্যার বদলা নিতে এমপির ভাইকে কুপিয়ে হত্যা!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০৮:৫০ এএম, ৩০ আগস্ট ২০২০
নিহত হাসিনুর রহমান

অডিও শুনুন

ছেলের হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে মামলা মীমাংসা করার উদ্যোগ নেয়ার বদলা নিতে কুষ্টিয়া-১ আসনের সরকারদলীয় এমপি আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশার ফুফাতো ভাই হাসিনুর রহমানকে (৫২) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছেন মজিবর রহমান বয়াতি নামে এক বাবা। হত্যার পর পালিয়ে না গিয়ে পুলিশের হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দিতে তিনি নিজ গৃহে অবস্থান করছিলেন।

হাসিনুরকে হত্যার পর ঘাতক মজিবর রহমান বয়াতি প্রকাশ্যে স্থানীয় শত শত লোকের সামনে চিৎকার করে বলতে থাকেন- ‘সন্তান হত্যার বদলা নিলাম।’ তবে পুলিশ সরাসরি সন্তান হত্যাকারীদের পক্ষ নিয়ে মামলা মীমাংসা করার বদলার বিষয়টি স্বীকার না করে বলছে- পূর্বশত্রুতার জের ধরে মজিবর রহমান বয়াতি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

শনিবার (২৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের নিজ বাড়ির কাছে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। এ সময় জব্বার নামে আরেকজন আহত হন। তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

নিহত হাসিনুর রহমান ফিলিপনগর গ্রামের মৃত ডা. জমির উদ্দীনের দ্বিতীয় ছেলে এবং স্থানীয় এমপি আ ক ম সারওয়ার জাহান বাদশার ফুফাতো ভাই। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন। হত্যার পর পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজিবর রহমান বয়াতি একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালের ঈদুল আজহার দিন বিকেল বেলায় পদ্মা নদীর পাড়ে আবেদের ঘাট এলাকায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে মজিবর রহমান বয়াতির ছেলে স্থানীয় পিকেএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আনোয়ার (১৫) কথা কাটাকাটির জের ধরে ছুরিকাঘাতে খুন হয়। এ ঘটনায় নিহত আনোয়ারের বাবা মজিবর কয়েকজনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার আসামি এবং আসামিদের পরিবারের সদস্যরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন। তদন্তের কয়েক মাস পর একই বছর দৌলতপুর থানা পুলিশ স্কুলছাত্র আনোয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মামলার বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের হওয়ায় এমপির প্রতিনিধি হিসেবে হাসিনুর রহমান সমঝোতা করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। আপস-মীমাংসার জন্য কয়েক দফায় তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করেন। সমঝোতার জন্য মজিবর রহমান বয়াতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন হাসিনুর। এ কারণে তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মজিবর।

হাসিনুর প্রতিদিন সকালে প্রাতর্ভ্রমণে বের হতেন। বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন মজিবর। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিলেন তিনি। সুযোগ বুঝে শনিবার সকালে মজিবর একাই হাসিনুরকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়েই ঢাকা থেকে এলাকায় ছুটে আসেন এমপি সারওয়ার জাহান বাদশা। শুধু পূর্বশত্রুতার কারণে নয় এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কারও ইন্ধন রয়েছে কি-না বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, ফিলিপনগর এলাকার পদ্মা নদীর আবেদের ঘাটের ইজারা বর্তমানে হাসিনুরের নামে। এছাড়াও পদ্মা নদী থেকে একই এলাকার মামুনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে আসছে। সপ্তাহ খানেক আগে নিহত হাসিনুর এবং তার অনুসারীরা অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দৌলতপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন। এছাড়া দৌলতপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রকাশ্যে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব রয়েছে। পুলিশ এসব বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, হাসিনুর রহমান সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমপির অবর্তমানে তার ব্যক্তিগত ও দলীয় কাজকর্ম হাসিনুর দেখভাল করতেন।

দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিশিকান্ত জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন তাতে পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্তের পরেই হত্যার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে, শনিবার রাত ১১টা পর্যন্তও এ হত্যাকাণ্ডেরর ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, হাসিনুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ একজনকে আটক করেছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হত্যার সঠিক কারণ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

পুলিশ সকালেই নিহত হাসিনুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় স্থানীয় পিএসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে নিজ এলাকা ইসলামপুর গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় এমপি সরওয়ার জাহান বাদশা, নিহতের বড় ভাই ব্রিগেডিয়ার (অব.) হাবিবুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে হাসিনুর রহমান হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।

আল-মামুন সাগর/আরএআর/পিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।