২৫ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত, পাবনা সুগার মিলে ৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ
অডিও শুনুন
ছয় মাস ধরে বেতন পান না রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন পাবনা সুগার মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এতে সাত শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাবনা সুগার মিলে এখনও ২৫ কোটি টাকা মূল্যের চার হাজার টন চিনি অবিক্রীত অবস্থায় গুদামজাত হয়ে পড়ে আছে। এই চিনি বিক্রি হলে শ্রমিকদের বকেয়ার টাকা পরিশোধ করা যেত। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
১৯৯৬ সালে প্রায় ৬০ একর জমি নিয়ে পাবনা সুগার মিলের যাত্রা শুরু। মিলের নিজস্ব কোনো আখ চাষের জমি নেই। জেলার ৯ উপজেলার আখচাষিদের আখেই চলে মিল। চলতি বছরের নভেম্বরে আবারও শুরু হবে আখ মাড়াই। বর্তমানে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। শ্রমিক-কর্মচারী, কৃষক ও আখ সরবরাহকারীদের পাওনা মিলিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা দেনা আছে মিলটি।
বর্তমানে পাবনা সুগার মিলে নিয়মিত শ্রমিক রয়েছেন ৪০০ জন, মৌসুমি শ্রমিক ২০০ এবং চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক ১০০ জন। শ্রমিক-কর্মচারীরা টানা ছয় মাস কোনো বেতন-ভাতা পাননি। তাদের বকেয়া এসে দাঁড়িয়েছে আট কোটি টাকায়। যারা মিলের আখচাষি রয়েছেন তাদের পাওনা আরও তিন কোটি টাকা।
আফসার আলী সরদার নামে এক আখচাষি বলেন, ‘আমি এই চিনিকলে নিয়মিত আখ সরবরাহ করি। পাওনা টাকা ও ভর্তুকিসহ ৭০ হাজার টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। আশ্বাসের পর আশ্বাসেও মিলছে না পাওনা টাকা। পরিবার নিয়ে এই করোনার সময় বেশ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। অচিরেই বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানাই।’
মিলের শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে লেবার হিসেবে কাজ করি। ছয় মাসের কাজের বিল এখানে পড়ে আছে। কোনোভাবেই টাকা পাচ্ছি না। শুধু কর্মকর্তারা আশ্বাস দেন। বিভিন্নজনের কাছে ধরনা দিয়েও টাকা তুলতে পারছি না। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ ও হতাশায় দিন কাটছে আখচাষিসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের। ছয় মাসের বকেয়া বেতন ও কৃষকের আখ চাষের দাম পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
পাবনা সুগার মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, আমরা শ্রমিকরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। অচিরেই সব দেনা পরিশোধসহ চিনি শিল্পকে উন্নত শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বুধবার (২৬ আগস্ট) সুগার মিলের প্রধান ফটকে ও অফিস কক্ষের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন শ্রমিক নেতারা। আগামী সাতদিনের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গত মৌসুমের অবিক্রীত ২৫ কোটি টাকার চিনি এখনও মজুত আছে। এই চিনি বিক্রি হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদফতরকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কোনো নির্দেশনা আসেনি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সামাধান হবে।
গত মৌসুমেও পাবনা সুগার মিল দেনার দায় মাথায় নিয়ে আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু করেছিল। চলতি বছরের নভেম্বরে আবারও নতুন বছরের আখ মাড়াই শুরু হবে।
আরএআর/জেআইএম