প্লাবিত উপকূলে নৌকা বিক্রির ধুম
অতিবৃষ্টি ও নদীর জোয়ারের তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার অর্ধশতাধিক গ্রাম। এসব এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নৌকাকে বেছে নিয়েছেন বাসিন্দারা। এতে ব্যস্ততা বেড়েছে নৌকার কারিগরদের।
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানা সদরে নৌকা কারিগররা নৌকা তৈরিতে কাজ করছেন রাতদিন। চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের। প্রতিদিন প্লাবিত এলাকা থেকে মানুষ আসছেন নৌকা কিনতে। উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ রক্ষায় সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের আজিবুর রহমান পাটকেলঘাটায় এসেছেন নৌকা ক্রয় করতে। তিনি জানান, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি এলাকার বাঁধ ভেঙে গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পাশের ইউনিয়ন প্রতাপনগরও প্লাবিত। স্বাভাবিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নৌকা ছাড়া চলাচলের বিকল্প কোন উপায় নেই তাই নৌকা কিনতে এসেছি। দুই ইউনিয়নের লাখেরও বেশী পানি পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের তরিকুল ইসলাম জানান, পাকা সড়কের কোথাও কোথাও ভেঙে গেছে। এছাড়া অধিকাংশ সড়কই পানির নিচে। যারা সরকারি, বেসরকারি চাকরি করেন তারাও এখন কর্মস্থলে ঠিকমতো যেতে পারছেন না। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।
পাটকেলঘাটার ঐশী ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানার সত্ত্বাধিকারী শেখ আনোয়ার হোসেন জানান, উপকূল প্লাবিত থাকার কারণে বর্তমানে নৌকা বিক্রির খুব চাপ যাচ্ছে। প্রতিদিনি এখান থেকে ১৬-১৭টি নৌকা বিক্রি হচ্ছে। দোকানের যারা শ্রমিক রয়েছে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করছে। শ্রমিকরাও হিমসিম খাচ্ছে কাজ করতে। রাতদিন বানভাসি মানুষদের জন্য পরিশ্রম করছে শ্রমিকরা।
রফিকুল ইসলাম নামের অপর নৌকা ব্যবসায়ী জানান, এখানে পাঁচটি নৌকার কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় রয়েছে অর্ধশত শ্রমিক। বন্যা দেখা দেয়ায় এখন বেচাবিক্রি বেশি হচ্ছে। তবে আমরা দাম বেশি নিচ্ছি না। আগেও যেমন দাম ছিল সেই দামেই নৌকা বিক্রি করছি। প্রতিটি নৌকার দাম ৭-৮ হাজার টাকা। আমাদের পুঁজি কম থাকায় বর্তমানে চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সরকারি বেসরকারিভাবেও ঋণ সহায়তা দিয়ে কখনও আমাদের সহায়তা করা হয় না।
সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) গৌরব কুমার দাস বলেন, অতিবৃষ্টি ও নদীর জোয়ারে বাঁধ ভেঙে উপকূল প্লাবিত হওয়ায় বর্তমানে নৌকার চাহিদা বেড়েছে। নৌকার কারিগরা কেউ সহযোগিতার দাবি নিয়ে আসেনি। তবে আবেদন করলে নৌকার কারিগরদের সরকারিভাবে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, উপকূলীয় আশাশুনি ও শ্যামনগরের প্লাবিত এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি মানুষ সীমাহীন কষ্ট ও দুর্ভোগে রয়েছে। উপকূলের বাঁধ কিছু অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কিছু অংশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বে রয়েছে। সেনাবাহিনী শুষ্ক মৌসুম শুরু হলেই বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু করবে। এছাড়া প্রাথমিকভাবে যেটুকু সংস্কার করা যায় সেটুকু সংস্কারের কাজ চলছে।
আকরামুল ইসলাম/এফএ/এমকেএইচ