মোংলায় ১৭৬৫টি চিংড়ির ঘের মালিক দিশেহারা
টানা বৃষ্টিপাত ও নদীতে আকস্মিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ এবং রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে মোংলার বিভিন্ন নিচু এলাকার কয়েক হাজার চিংড়ি ঘের।
ভেসে গেছে ঘেরের বাগদা চিংড়িসহ অন্যান্য সাদা মাছও। বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে গত দুই তিনদিনে এখানকার প্রায় ১ হাজার ৭৬৫টি চিংড়ি ঘের তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
এতে প্রায় ৬ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কথা জানিয়েছেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এজেডএম তৌহিদুর রহমান। ঘের মালিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গাজী আকবর হোসেন নামে এক ঘের মালিক বলেন, মোংলা উপজেলার জয়মনিরগোলে আমার ৮০ একর এর একটা মাছের প্রজেক্ট আছে। এবার অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে পুরো প্রজেক্ট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ প্রোজেক্ট করতে জনতা ব্যাংক মোংলা শাখা থেকে ১৫ লাখ টাকা লোন করেছি। হাড়ির টাকাসহ প্রজেক্টিতে আমার প্রায় ৩০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে। সেটি ডুবে গিয়ে সব মাছ বের হয়ে যাওয়ায় এখন পথে বসার উপক্রম। আমি এখন কি যে করবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। কিভাবে ব্যাংকের ঋণ শোধ করবো, কিভাবে কর্মচারীদের বেতন দেব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। কয়েক মাস আগে একইভাবে আম্ফানেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তা পুষিয়ে উঠার আগেই আবার ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।
আরেক ঘের মালিক মো. ওলিয়ার রহমান বলেন, আমি আর্থিকভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। আমার ৩৫ বিঘা, ৪০ বিঘা ও ৫০ বিঘার তিনটি ঘের কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও নদীতে আকস্মিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঘেরের সমস্ত মাছ বের হয়ে গেছে। ৩টি ঘেরে আমার ১৫ লাখ টাকার মতো ইনভেস্ট করা। সব কিছু হারিয়ে আমি এখন দিশেহারা।
এদিকে ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং মাছ বের হয়ে যাওয়ার এখন খালি ঘের পাহারা দিচ্ছেন মালিকেরা। সেই সাথে ভেঙে যাওয়া ঘেরের বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করছেন চাষিরা।
চাষিরা বলছেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পানি আর সেই সাথে হঠাৎ করে নদীর অতিরিক্ত পানির চাপে তলিয়ে গেছে তাদের একমাত্র উপার্জনের উৎস চিংড়ি ঘের। কিছুদিন আগে আম্ফানের তাণ্ডবেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি ঘেরের। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আবার অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ঘেরের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনোভাবে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
অপরদিকে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন দৈনন্দিন খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা।
এমএএস/এমকেএইচ