একটা সিলের জন্য মুমূর্ষু রোগী ভর্তি নিলো না কোনো হাসপাতাল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:৫৪ এএম, ২৫ আগস্ট ২০২০

অডিও শুনুন

হবিগঞ্জ শহরের টাউন হল রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছে এক নারী। এমনকি হাসপাতালের ছাড়পত্রে সিল না থাকায় সিলেটে নিয়েও কোনো হাসপাতালে ভর্তি করা যায়নি ওই মুমূর্ষু নারীকে। এ ঘটনায় সোমবার রাতে সেন্ট্রাল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে রোগীর স্বজনরা বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রোগীর স্বজনরা জানান, বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর গ্রামের মৃত নোয়াজিশ মিয়ার স্ত্রী কদর চাঁনের (৬৫) জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়ে। এক সপ্তাহ আগে তিনি সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার সকালে সদর আধুনিক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আরশেদ আলী তাকে অপারেশনের জন্য শহরের টাউন হল রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপারেশনের পরামর্শ দেন। ডা. আরশেদ আলীর পরামর্শে ওই নারীকে সেন্ট্রাল হসপিটালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। বিকেলের দিকে ডা. আরশেদ আলী সেন্ট্রাল হসপিটালে ওই নারীর জরায়ু টিউমারের অপারেশন করেন।

কিন্তু অপারেশন শেষে ওই নারীকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করার কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও জরায়ুতে লাগানো ক্যাথেটার দিয়ে প্রস্রাব আসা বন্ধ থাকে। রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও প্রস্রাব বের হয়নি। এতে ওই নারীর পেট ফুলে উঠে। এক পর্যায়ে রাত ১টার দিকে ডা. আরশেদ আলীকে খবর দিলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ওই নারীর চিকিৎসা করেন। কিন্তু এরপরও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় সোমাবর ভোরে তাকে সিলেটে পাঠানো হয়।

এদিকে মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে সিলেটে পাঠালেও রোগীর সঙ্গে দেয়া ছাড়পত্রে সিল দেয়নি সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। ফলে সিলেটের কোনো হাসপাতাল ওই রোগীকে ভর্তি নেয়নি। এতে রোগীর অবস্থা আরও শঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে। সারাদিন সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও রোগীকে ভর্তি করতে না পারায় সোমবার রাত ৯টার দিকে আবারও রোগী নিয়ে হবিগঞ্জ ফিরে আসেন স্বজনরা। পরে তারা সেন্ট্রাল হসপিটালে এসে বিক্ষোভ করলে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। এক পর্যায়ে ছাড়পত্রে সিল নিয়ে আবারও তারা রোগীকে নিয়ে সিলেটে চলে যান।

এ ব্যাপারে রোগীর ভাগ্নে মহিবুল ইসলাম শাহীন বলেন, ডাক্তার আরশেদ আলী ও সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে মৃত্যুর মুখে পড়েছেন আমাদের রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্রে সিল না দেয়ার কারণে সিলেটের কোনো হাসপাতালই আমাদের রোগীকে ভর্তি নেয়নি। ডা. আরশেদ আলী অপারেশনের সময় রোগীর জরায়ু কেটে দিয়েছেন। ফলে তিনি এখন মৃত্যু পথযাত্রী।

এ ব্যাপারে সেন্ট্রাল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার অসীম দেব বলেন, এ রোগীকে রিলিজ দেয়ার সময় আমি ছিলাম না। তবে এখন আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ওই নারীকে সিলেটে নিয়ে যাচ্ছি এবং রোগীর সুস্থতায় যা করা প্রয়োজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করবে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে নারীর অপারেশন করা সেই চিকিৎসক ডা. আরশেদ আলীর সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ডা. আরশেদ আলীর বিরুদ্ধে এর আগেও ভুল চিকিৎসা, রোগীদের সঙ্গে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সদর হাসপাতালে আসা রোগীদের অপারেশনের জন্য বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শও তিনি নিজেই দিয়ে থাকেন।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।