সালিশে ৩ বোনকে থু থু খাওয়ালেন প্রধান শিক্ষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৭:৫৭ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২০
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে অশ্লীল আচরণের অভিযোগ এনে তিন বোনকে থু থু খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে দাঁতভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (১৫ আগস্ট) সকালে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ছাটকড়াইবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিচারের নামে গ্রামবাসীর সামনে নাকে খত দেয়ার পাশাপাশি ভুক্তভোগী তিন বোনকে জোড় করে থু থু খাওয়ানো হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ঘটনাটি ঘটলেও ভয়ে ও লোকলজ্জায় বিষয়টি গোপন রাখেন নির্যাতিতরা। পরে প্রতিবেশীদের পরামর্শে শুক্রবার (২১ আগস্ট) বিকেলে এসব কথা স্বীকার করেন তারা।

তিন বোন অভিযোগ করে বলেন, অকারণে প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, মোকছেদ দেওয়ানী ও আজাহার আলী বিচারের নামে আমাদের এভাবে হেনস্তা করেছেন। লজ্জায় ও অপমানে আমরা এখনও কারও কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দেই।

থানায় অভিযোগের বিষয়ে তারা বলেন, আমরা অসহায় পরিবারের সন্তান। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চলেন। তাই তার বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করে টিকে থাকা সম্ভব না।

ভুক্তভোগী পরিবার ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, যারা বিচার করেছে তারা প্রভাবশালী। গ্রামে তাদের দাপটে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। গত শুক্রবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় দুই ছেলে ওই মেয়েদের বাড়িতে অবস্থান নেয়। এ সময় এলাকার কিছু ছেলে তাদের আটক করে এবং ছেলে দুটির কাছ থেকে ১৮ হাজার টাকা আদায় করে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের কানে গেলে ইউপি সদস্যসহ কয়েকজনকে নিয়ে পরদিন জহুরুল ইসলামের বাড়ির সামনে রাস্তায় সালিশ বসানো হয়। ওই ১৮ হাজার টাকা নিয়ে নেন প্রধান শিক্ষক সাইফুল। সেই টাকা ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন ভাগ করে নেন। পরে তিন বোনকে অভিযুক্ত করে নাকে খত এবং থু থু খেতে বাধ্য করেন সালিশের বিচারক সাইফুল ইসলাম।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, সালিশের বিচারক প্রধান শিক্ষক উপস্থিত থেকে ওই মেয়েদের থু থু খাইয়েছেন। বিচারকদের অনেকবার বলেছিলাম আইন হাতে নিয়েন না। এছাড়াও টাকা নেয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, অপরাধ করেছে তাই তাদের থু থু খাওয়ানো হয়েছে। তবে তাদের থু থু তারাই খেয়েছিল।

অপর অভিযুক্ত আজাহার আলী ও মোকছেদ দেওয়ানী জানান, ওই তিন মেয়েকে অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রামের সকলের সামনে থু থু খাওয়ানো হয়েছে। তারা অপরাধ করেছে তাই শাস্তি দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছামছুল হক বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।

রৌমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু দিলওয়ার হাসান ইনাম জানান, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাজমুল হোসাইন/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।