ঝিনাইদহে পাটের ফলন বিপর্যয়, লোকসানে কৃষক
বৈরী আবহাওয়া আর অসময়ে বৃষ্টির কারণে ঝিনাইদহে এবার পাটের ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে জেলার ৭০ ভাগ জমির পাট জমি থেকে কাটা হয়ে গেছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, এ বছর ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় ২২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ২২০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৬শ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৮২০ হেক্টর, মহেশপুরে ৩ হাজার ২১০ হেক্টর, শৈলকুপায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর ও হরিণাকুন্ডতে ৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন।
এদিকে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন, পাটের বাড়ন্ত সময় বৃষ্টির কারণে ফলন ভালো হয়নি।
সদর উপজেলার পবহাটি গ্রামের কৃষক আলিম উদ্দিন জানান, তিনি ১ বিঘা জমিতে এ বছর পাট আবাদ করেছেন। পাট বীজ, চাষাবাদ, সার প্রয়োগ, নিড়ানি, পাট পরিচর্যা, শ্রমিক খরচ, পাট জমি থেকে কেটে পানিতে জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার টাকা। ২২ কাঠা জমিতে তিনি পাট আশা করছেন ১৩ থেকে ১৪ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৮ হাজার টাকা। পাটকাঠি বিক্রি হবে ৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে তার লোকসান হচ্ছে ১ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, আমার জমিতে অন্যদের তুলনায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবুও লোকসান হবে। তাহলে যাদের ফলন ভালো হয়নি তাদের কি পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে!
শৈলকুপা উপজেলার উত্তর মির্জাপুর গ্রামের পাটচাষি রুহুল আমিন জানান, পাটবীজ জমিতে বপন করার পর পাটের চারা ভালো গজিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পাটের গোড়ায় শিকড় গজিয়ে যায়। যে কারণে এবার ফলন কম হয়েছে।
ওই উপজেলার ভাটই গ্রামের পাটচাষি রাশেদ মোল্লা বলেন, বাজারে পাটের দাম ১৬শ থেকে ২ হাজার টাকা মণ হলেও উৎপাদন কম হওয়ায় এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
মহেশপুর উপজেলার সামন্তা গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া জানান, এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে একটি জমির পাট বড় না হওয়ায় শুরুর দিকে তা কেটে অন্য আবাদ করছি। দুই বিঘা জমিতে যে পাট ছিল তারও ফলন ভালো হয়নি। এ বছর পাট চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও পূরণ হচ্ছে না উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/আরএআর/এমকেএইচ