স্কুলের নিরাপত্তা কর্মী পদের জন্য ১৬ লাখ টাকা!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০২০

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার পাঁঠাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৬ লাখ টাকায় নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের বাণিজ্য চলছে। আর এমন অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও তার ভাই সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। আজ বুধবার (১৯ আগস্ট) ওই বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চাকরি প্রার্থীরা একটি স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের পাঁঠাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্য পদে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের জন্য গত ২৫/০৬/২০২০ তারিখে একটি আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এর বিপরীতে স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. রকি, স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হক, সাবেক ছাত্রলীগ মিজানুর রহমান ও শামিম হোসেনসহ ছয়জন প্রার্থী আবেদন করেন।

ইতোপূর্বে ২০১৫ সালে নৈশপ্রহরী পদে এবং ২০১৬ সালে আলাদা করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। ২০১৬ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে মাইনুল ইসলাম নামে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ তাকে নিয়োগে যোগদান দেয়া হয় নৈশপ্রহরী পদে। অদ্যবধি তাকে ওই পদে বহাল রাখতে তিনমাস ধরে রাত দিন কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে।

কিন্তু বর্তমানে তাকে ওই পদ থেকে বঞ্চিত করে ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির পছন্দের ব্যক্তি পাঁঠাকাটা গ্রামের সোলাইমান আলীর ছেলে মো. রকি নামে এক যুবককে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের জন্য ইতোপূর্বে প্রার্থী মিজানুর রহমানের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা অগ্রীম নিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।

এর আগে এমএলএসএস পদে ছিলেন ঘনপাড়া প্রসাদপুরের আব্দুর রাজ্জাক। তিনি অব্যাহতি দিয়ে গত জুন মাসে তুড়ুকবাড়িয়া দাখিল মাদরাসায় কারী হিসেবে যোগদান করেন। তারপর থেকে পদটি শূন্য রয়েছে।

বিনোদপুর গ্রামের প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, আমার কাছ থেকে যে টাকা নেয়া হয়েছে তা ফেরত দিলে তো কোনো কথা নাই। তবে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগে যে পরীক্ষা নেয়া হবে তা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই তারা নিয়োগ দেবে।

আরেক প্রার্থী মাহমুদুল হক অভিযোগ করে বলেন, রকি নামে একজনকে ১৫ লাখ টাকায় নিয়োগ দেয়া হবে বলে লেনদেন হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি জানাই।

মো. রকি বলেন, মানুষতো অনেক কথাই বলে। তবে কোনো টাকার লেনদেন হয়নি। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে টাকা ছাড়াই নিয়োগ দেবে।

প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন টাকা নিয়ে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যদি নিয়োগবিধি উপেক্ষা করে নিয়োগ দিতাম তাহলে শিক্ষা অফিসকে অবগত করতাম না। স্বচ্ছতার সহিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। পরীক্ষায় যে ভালো করবে তাকেই নিয়োগ দেয়া হবে।

মহাদেবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পরীক্ষা নেয়ার জন্য চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। তবে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়া হবে এমন বিষয়টি জানা নেই। যেহেতু দেনদরবারের একটা বিষয় উঠে আসছে সেহেতু নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সহিত করা হবে এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

আব্বাস আলী/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।