রঙিন কাগজের পরিবেশবান্ধব কলমে কৌতূহলী মানুষ
কলমের নাম ‘শুভ পরিবেশবান্ধব কলম’। নাম শুনলেই কৌতূহলী হয়ে ওঠে মন। ‘পরিবেশবান্ধব কলম’; সে আবার কী? ব্যাখ্যা করলেন কলমের উদ্ভাবক নাছিমা আক্তার। জানালেন, শীষ’র (বলপয়েন্ট কলমের রিফিল) সঙ্গে কাগজ আর আঠায় তৈরি এ কলম। এর সিংহভাগই পচনশীল। নাছিমা আক্তারের মতে, দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার প্লাস্টিকের কলম ব্যবহৃত হয়। সেই সব কলম মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়, যা অপচনশীল। এ থেকে পরিবেশ নষ্ট হয়, মাটি ও বাতাস নষ্ট হয়। কিন্তু তার তৈরি কলমে কাগজের ব্যবহার হয়, কাগজ পচনশীল। এ কারণে এই কলমের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।
যশোর শহরের লোনঅফিস পাড়ায় থাকেন গৃহবধূ নাছিমা আক্তার। ছোট থেকেই শখ ছিল নতুন কিছু তৈরি করার। কিশোরী বয়সে রঙিন কাগজ পেলেই ঘর সাজাতেন। তৈরি করতেন ফুল কিংবা খেলনা। ছোট বেলার সেই শখ মধ্য বয়সে স্বামী-সংসারে এসে উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হয়েছে। রঙিন কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি করছেন রঙ-বেরঙের কলম। পরিবেশবান্ধব সেই কলমে লিখছেন যশোরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
নাসিমার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় গোছানো রয়েছে বলপয়েন্ট কলমের রিফিল, এ-৪ সাইজের রঙিন কাগজ, ফেভিকল আঠা, কালার স্টিকার। টিনশেড বাড়ির বারান্দায় বসে তিনি তৈরি করছেন কলম। এ কাজে তাকে সহায়তা করছে ছেলে শুভ। ছেলের নামেই কলমের নাম দিয়েছেন ‘শুভ পরিবেশবান্ধব কলম’। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে শুভ তাকে কলম তৈরি করতে সহযোগিতা করে। বর্তমানে তিনি এ কলম বিক্রি করছেন যশোর সরকারি এম এম কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, মহিলা কলেজ, যশোর জিলা স্কুল, আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমি, বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
গৃহবধূ নাছিমা আক্তার বলেন, ছোট বেলায় শখ করে কলম বানানো শেখেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে এ শখ তার কাজে লাগবে তা কখনও ভাবেননি। প্রতিদিন হাতে প্রায় ৩০০ পিস কলম তৈরি করতে পারেন। আর এ কলম প্রতি পিস বিক্রি করেন পাঁচ টাকা করে। তার এ কলম তৈরি করতে খরচ হয় ৯০০ টাকার মতো। ৩০০ কলম বিক্রি করে লাভ করেন ৫০০ টাকা। আর এ আয় দিয়েই তার সংসার চলে। পাশাপাশি ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলে এ টাকা থেকে।
নাসিমা আক্তার বলেন, তার স্বামী মীর রবিউল আলম অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সৈনিক। অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন বাড়িতে রয়েছেন। তাদের ঘরে এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়েটা অনার্স পড়েন এবং ছোট ছেলের উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হচ্ছে।
নাছিমা আরও জানালেন, কলম তৈরি করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ইতোমধ্যে এলাকার দুই নারীকে রঙিন কাগজ থেকে কলম তৈরি করা শিখিয়েছেন। নারীদের বেকারত্ব দূর করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। কিন্তু বাধা হচ্ছে পুঁজি স্বল্পতা। পুঁজি পেলে ব্যবসাটি সম্প্রসারণ করবেন।
তিনি আরও বলেন, রঙিন কাগজ থেকে তৈরি করা পরিবেশবান্ধব এ কলম অন্য কেউ এখনও তৈরি করেনি। যে কারণে বাজারে এ কলম পাওয়া যায় না। প্রাথমিকভাবে তিনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিক্রি করছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কলম ব্যবহারে প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে বিক্রি করার পরিকল্পনাও রয়েছে তার।
মিলন রহমান/এমএএস/পিআর