বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ রাজশাহীবাসী


প্রকাশিত: ০৫:১১ এএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৫
ফাইল ছবি

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ রাজশাহীবাসী। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা মালামাল ব্যবহারের ফলে চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও মহানগরীতে অহরহই ঘটছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন মহানগরীর শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ মানুষ।

সূত্র জানায়, সকল ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা মালামাল টেন্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় দফতর বিভিন্ন জোনের কাছে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করে থাকে। আর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় দফতরের এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিও রয়েছে। এ দুর্নীতির কাছে অসহায় ও নতি স্বীকার করেই আঞ্চলিক বিদ্যুৎ জোনের কর্মকর্তারা ক্রয় করতে বাধ্য হন নিম্নমানের ট্রান্সফরমারসহ সকল ধরনের বৈদ্যুতিক মালামাল বা যন্ত্রপাতি।

রাজশাহীতে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও এই ঘটনার কারণে রাজশাহী জোনেও অহরহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে। বর্তমানে রাজশাহীতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এর মধ্যে এখন রাজশাহীতে সব থেকে নিম্নমানের ট্রান্সফরমার ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে একটু ওভার লোডিং-এর কারণে কেটে যাচ্ছে বা জ্বলে যাচ্ছে ট্রান্সফরমারের ফিউজ। ফলে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না রাজশাহীবাসী। বর্তমান সরকারের বাংলাদেশকে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার যে প্রতিজ্ঞা তাকেও ম্লান করে দিচ্ছে এই সব কর্মকাণ্ড।

সূত্রটি আরো জানায়, রাজশাহীতে বিদ্যুতের প্রতিদিনের গড় চাহিদা প্রায় ৫০ মেগাওয়াট। পাচ্ছেও ৫০ মেগাওয়াট এবং বিদ্যুৎ বিক্রয় হয় ৪৫ থেকে ৫০ মেগাওয়াট। রাজশাহীর ৪ ডিভিশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। অতিরিক্ত গরম পড়লে বাড়ি অফিস আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসি ও ফ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের তাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে গেছে। এর ফলে অনেক সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার বেড়ে গিয়ে ৫০ মেগাওয়াটের স্থলে ৭৫ মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়ায়। ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি বিদ্যুতের চুলাসহ বিভিন্ন ভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। ফলে ট্রান্সফরমারের উপর চাপ পড়ছে। অহরহ ট্রান্স মিটার নষ্ট হচ্ছে, ট্রান্স মিটারের ফিউজ জ্বলে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এ দায়িত্বে থাকা কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের অবহেলা ও মেনটেনেন্সকে দায়ি করেছেন অনেকেই।

এদিকে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং দীর্ঘদিন পড়ে থাকা সঞ্চালন লাইনে পুরাতন তার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। এর ফলে তারের ইনসুলেসন নষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতি ঝেড়ে ফেলে নিত্য নতুন বৈদ্যুতিক তার ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অপারগতাকে দায়ি করেছেন ভুক্তভোগী মহল।

একই সঙ্গে কোনো লাইনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সূত্রিতা হয়ে থাকে। অনেক সময় কোনো সংযোগ লাইনে গাছ পড়লে বা এক তারের সঙ্গে অন্য তার পড়ে আর্থিং হলে সে লাইন মেরামতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। অথচ বিদ্যুৎ সচল রাখতে ক্ষতিগ্রস্থ লাইন মেরামতের জন্য সে লাইনকে অফ করে দিয়ে অন্য লাইনের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার নিয়ম থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা করা হয় না। এর ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ মানুষকে।

নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ছাড়া দিনের পর দিন পুরানো যন্ত্রপাতি দিয়েই সচল রাখা হয়েছে রাজশাহীর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবসা।

এদিকে, বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে জং ধরা তার বা পুরাতন ট্রান্সফরমার ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। একটু ঝড় বা বৃষ্টি হলেই উক্ত তার কেটে বা ছিঁড়ে অন্য তারের উপর পড়ে আর ট্রান্সফরমারে পড়ে ফিউজ জ্বলে অকেজো হওয়া নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর এ ঘটনাকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আরেক কারণ বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

বিষয়গুলো নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শিরিন ইয়াসমিন জাগো নিউজকে জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা প্রসস্থকরণের কাজ চলছে। ফলে রাস্তার পার্শ্বে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিগুলোর অবস্থান পরিবর্তন করা হচ্ছে। এসময় মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সামান্য লোডসেডিং হচ্ছে। তবে তিনি শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে নিন্মমানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেন।

শাহরিয়ার অনতু/ এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।