পুলিশের লাঠিচার্জে সিফাতের সহপাঠীদের মানববন্ধন পণ্ড
অডিও শুনুন
কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের পর গ্রেফতার শাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবিতে বরগুনায় আয়োজিত মানববন্ধনে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে সিফাতের নিজ এলাকা বরগুনার বামনায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুর ১২টার দিকে বামনায় মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন সিফাতের সহপাঠীরা। বামনার কলেজ রোড সড়কে শান্তিপূর্ণভাবে চলা মানববন্ধনে হঠাৎ পুলিশের একটি টিম এসে ব্যানার-ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়। এরপরও শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি চলছিল।
পরে বামনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন এসে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের গালিগালাজ করে লাঠিচার্জের নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে মুহূর্তেই মানববন্ধন পণ্ড হয়ে যায়। ওসি নিজেও লাঠিচার্জ করেন।
পুলিশের লাঠিচার্জে আহত রুবেল বলেন, সিফাত অত্যন্ত ভালো ছেলে। আর যাই হোক সিফাতের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ কোনোভাবেই যায় না। মিথ্যা মামলায় নির্দোষ সিফাত জেলে রয়েছে। তার মুক্তির জন্য মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এ সময় পুলিশ প্রথমে আমাদের মানববন্ধনের ব্যানার-ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়। এরপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছিলাম। পরে বামনা থানার ওসি এসে আমাদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেন।
তিনি আরও বলেন, সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করায় পুলিশ আমাদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যা দিয়েছে। এছাড়া নাতির মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে আসায় সাংবাদিকদের সামনে সিফাতের নানা মো. আইউব আলী হাওলাদারকে গালমন্দ করার পাশাপাশি হুমকি দিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে সিফাতের নানা মো. আইউব আলী হওলাদার বলেন, পুলিশ আজ যা করেছে তা মোটেও ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে বামনা থানা পুলিশর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমাদের অনুমতি না নিয়ে একদল দুষ্কৃতকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছে বলে আমি জানতে পারি। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলে মানববন্ধন বন্ধ করে দিয়েছি।
সিফাতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সিফাত বড়। সিফাতের একমাত্র বোন অনন্যা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ১০ বছর আগে বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর সিফাতের মা শিরীন আক্তার শিলা ৯ বছর ধরে লন্ডন প্রবাসী। বাবা মো. মোস্তফা থাকেন ঢাকায়।
সিফাতের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বরগুনার বামনা উপজেলার পশ্চিম সফিপুর গ্রামের নানা বাড়িতে। বামনার সরকারি সারওয়ার জান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সিফাত। এরপর বামনা সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে।
ঢাকায় ভর্তি হওয়ার পর খালার বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন সিফাত। বছরে দু-চারবার বামনা এলেও পড়ে থাকতেন ক্যামেরা আর ট্রাইপড নিয়ে। ছবি তোলার নেশায় ঘুরে বেড়াতেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়। শৈশবে বাবা-মায়ের স্নেহবঞ্চিত হলেও কখনও সিফাত বিপথগামী হননি বলে জানান তারা।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/আরএআর/এমএস