ঈদের দিন বানভাসিদের জন্য বিরিয়ানি নিয়ে গেলেন ফরিদপুরের ডিসি
ফরিদপুরে বানভাসিদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিলেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। ঈদের দিন শনিবার (০১ আগস্ট) দুপুরে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেয়া বানভাসি মানুষের মাঝে হাজির হন জেলা প্রশাসক।
সাথে নিয়ে যান রান্না করা খাবার বিরিয়ানি। বানভাসি মানুষের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় শেষে তাদের হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট তুলে দেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে সব কষ্ট ভুলে গিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় বানভাসি মানুষ।
দুপুর ২টার দিকে বন্যাকবলিত শহরতলীর সাদীপুর বেড়িবাঁধ, ময়নার মোড়, ভাজনডাঙ্গা, বিলগজারিয়া ও খুশির বাজার এলাকায় বানভাসি ৬ শতাধিক মানুষের মাঝে রান্না করা বিরিয়ানি বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।
বেড়িবাঁধে খাবার বিতরণকালে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, বানভাসি মানুষের পাশে সব সময় রয়েছে জেলা প্রশাসন। তাদের রান্না করার কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই ঈদের দিন তাদের জন্য একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করলাম। তাদের সাথে ঈদের আনন্দ একটু ভাগাভাগি করে নিলাম।
তিনি বলেন, বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া রান্না করা খিচুড়িও বিতরণ করা হচ্ছে। একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা, ‘উই কেয়ার’ এর সমন্বয়কারী সঞ্জয় দাস, ‘তরুছায়া ফাউন্ডেশন’ এর সভাপতি খালিদ মাসুদ সজিব ও ‘আমরা সুহৃদ’ এর আহ্বায়ক রেজাউল করিমসহ কর্মকর্তাবৃন্দ।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা বলেন, ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে নিতে বানভাসি মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার নিয়ে ঈদের দিন হাজির হয়েছি। প্রত্যেকের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি। সবসময় তাদের পাশে আছি।
জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৫৫০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি হয়ে রয়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। বন্যায় এ পর্যন্ত ৮ হাজার ১৬৭ হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে গেছে ৪০ মিটার। রাস্তা ভেঙে গেছে ১ হাজার ৪শ মিটার। ৩২টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৬৮ জন মানুষ ও ১ হাজার ৩৪৪টি গবাধিপশু আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া বেড়িবাঁধে ২ হাজার ২৫০ জন মানুষ ও ৪শ গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। গঠন করা হয়েছে ২৫টি মেডিকেল টিম।
বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। শুধু ত্রাণ বিতরণ নয়, বানভাসি মানুষের মাঝে প্রদান করা হচ্ছে শুকনো খাদ্য সামগ্রী, পানির ক্যান, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। বিভিন্ন বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আগতদের মাঝে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছে নিয়মিত। শিশুদের জন্য আলাদাভাবে নিয়মিত পুষ্টিকর শিশু খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে।
এছাড়া বন্যা কবলিত কিশোরী ও নারীদের পাশে স্বাস্থ্য সামগ্রী নিয়ে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একটি সংস্থার মাধ্যমে বন্যা কবলিত নারী ও কিশোরীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে মাসিক সুরক্ষা সামগ্রী (স্যানিটারি ন্যাপকিন)।
গত বুধবার (২৯ জুলাই) পবিত্র ঈদ-উল-আযহার আগেই ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসকের দিক নির্দেশনায় জেলা সদরে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপক কুমার রায়, চরভদ্রাসন উপজেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা ও সদরপুর উপজেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল কবির ত্রাণ তুলে দেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে জেলায় ৫৫০ মেট্টিক টন জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ৪ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে জেলায় নিয়মিত গো খাদ্য প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে শনিবার (০১ আগস্ট) সকালে ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মা নদীর পাড় ধলার মোড় ও আশপাশের এলাকার বন্যার্তদের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে সেনাবাহিনী। নবম পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় ৮১ পদাতিক ব্রিগেডের অধীনস্থ ২৮ বীর এ ঈদ উপহার বিতরণ করে।
সেনা প্রধানের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গত ৫ শতাধিক মানুষের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। ক্যাপ্টেন সাকিফ মুবাশ্বির এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টিম এ ঈদ উপহার বিতরণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।
বি কে সিকদার সজল/এমএএস/পিআর