বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ ১০ কেজি, চেয়ারম্যান দিলেন ৪ কেজি চাল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:০০ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২০
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ি ইউনিয়নে চার কেজি করে ভিজিএফের চাল দেয়া হয়

ঈদুল আজহা উপলক্ষে দুস্থ ও বন্যার্তদের মাঝে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল ১০ কেজি করে দেয়ার কথা থাকলেও কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ি ইউনিয়নে চার কেজি করে দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বিকেলে ইউনিয়নের তিন ওয়ার্ডের সুবিধাভোগীদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। এ সময় ১০ কেজির জায়গায় কাউকে চার কেজি আবার কাউকে পাঁচ কেজি করে দেয়া হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে সুবিধাভোগীদের ওপর চড়াও হন বেরুবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব।

বেরুবাড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কার্ডধারী নূর-ইসলাম বলেন, আমার একটি কার্ডের বিপরীতে সাড়ে চার কেজি চাল দিয়েছেন চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভিজিএফ কার্ডধারী এরশাদুল হক বলেন, আমাকে চার কেজি চাল দেয়া হয়েছে। ১০ কেজি চাল দাবি করলে আমাদের ওপর চড়াও হন চেয়ারম্যান।

ভিজিএফ কার্ড বাতিল হয়ে যাওয়ার ভয়ে নাম না জানিয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক সুবিধাভোগী জানান, আমার পরিবারে দুটি কার্ড দেয়া হয়েছে। সেই দুই কার্ডের বিপরীতে সাত কেজি চাল দেয়া হয়েছে। ১০ কেজি করে চাল চাইলে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন চেয়ারম্যান।

একাধিক সুবিধাভোগীর অভিযোগ, বন্যার পানি বেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে বসে থেকে ৪-৫ কেজি চাল জুটেছে তাদের ভাগ্যে। চাল কম দেয়ার প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী কার্ড বাতিলের ভয় দেখান। ভিজিএফের এই চার কেজি চাল কোনো পরিবারের তিন বেলায় শেষ হয়ে যাবে।

বেরুবাড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রতি কার্ডে নয় কেজি করে চাল দেয়ার কথা চেয়ারম্যানের। বিতরণের সময় আমি পরিষদে ছিলাম না, চাল কম দিয়েছে কি-না জানি না। তবে আমার এক প্রতিবেশী সাত কেজি চাল পেয়েছেন। এতে বোঝা যায় চাল কম দেয়ার ঘটনা সত্য।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেলবার হোসেন বলেন, আমার ওয়ার্ডের সব পরিবার এক মাসের ওপরে পানিবন্দি। প্রায় ৫০০ পরিবার অসহায় অবস্থায় আছে। অথচ আমাকে দেয়া হয়েছে ৩৫০টি কার্ড। সেগুলো আবার চুরি হয়ে যায়। পরে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে সাদা কার্ড তৈরি করি। চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে সেখানে ১০০ কার্ড বেশি করেছি। পরে চেয়ারম্যান ৩৫০ কার্ডের চাল সবার মাঝে ভাগ করে দিয়েছেন। এই কারণে চাল কম হয়েছে।

চাল কম দেয়ার বিষয়টি জানতে বেরুবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেবের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর আহম্মেদ মাছুম বলেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে চাল কম দেয়ার বিষয়টি শুনেছি। যারা চাল কম পেয়েছেন তারা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রেজাউল করিম বলেন, ভিজিএফের চাল কম দেয়া কিংবা অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি অনিয়ম করেন তা খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, বেরুবাড়ি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার ২১২ জন সুবিধাভোগীর বিপরীতে ৫৫ দশমিক ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। নাগেশ্বরীর একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৮৩ হাজার ৭৫০ সুবিধাভোগীর বিপরীতে ৮৩৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়।

নাজমুল/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।