খাবারের অভাবে প্রতিরাতেই কাঁদেন তারা

জাহিদ খন্দকার জাহিদ খন্দকার গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২০

‘খাবারের অভাবে প্রতিরাতে কান্না-কাটি করি। এক বেলা খাই, দুই বেলা না খেয়ে থাকি। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা পরিচিতদের ত্রাণ দেয়। আমরা পাই না, গত এক মাসের বন্যার পানিতে হাবুডুবু খেয়ে বাঁধের ওপর পলিথিনের তৈরি ডেরায় আশ্রয় নিয়ে আছি। কেউ খোঁজ নিতে আসে না। আমাদের আবার ঈদ আছে?’

কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমাটি গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নেয়া ৭০ বছর বয়সী ভুলু বেওয়া।

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে উৎসব। ঈদ মনে কষ্টের অবসান। ঈদ মানে গরিবের সঙ্গে ধনীর মিলন। কিন্তু এখন এ কথাগুলোর সঙ্গে গাইবান্ধার নদীপাড়ের মানুষের জীবনের মিল নেই। জীবন বাঁচানোর তাগিদে কর্ম করতে চাইলেও সুযোগ নেই তাদের। এক বেলা খেয়ে, কখনও না খেয়ে দিন কাটছে এসব মানুষের।

সরকারি সহায়তা সিন্ডিকেটের জালে আটকা পড়েছে। টানা এক মাসের ভয়াবহ বন্যা ও নদীভাঙনে বিপর্যস্ত লোকজন বাঁচার তাগিদে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতির কারণে ত্রাণ পাচ্ছে না নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ।

Eid-Item-Gaibandha-2

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পুটিমাটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষদের ঈদ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। কখন ঈদ আসবে, কখন যাবে তা ভাবার সময় নেই তাদের। চলতি বন্যায় গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও যমুনা নদীপাড়ের মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

সাঘাটার পুটিমাটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নেয়া ভুলু বেওয়া জানান, তার স্বামী মারা গেছেন এক যুগ আগে। দীর্ঘ চেষ্টার পরও কপালে জোটেনি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ১০ হাজার টাকা চান। ফলে কষ্ট করেই জীবন চলছে তার। টানা এক মাসের বন্যার মাঝে ঈদ আসছে। ধনীরা যখন ঈদের আনন্দে থাকবে তখন তার চুলায় আগুন জ্বলতেও পারে নাও পারে।

ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নেয়া ভুলু বেওয়ার মতো লাইলী, হালিমা ও মর্জিনা বেওয়ারও একই অবস্থা।

লাইলী বেগম বলেন, ঈদের দিন কোরবানির গোস্ত কপালে জুটবে না। আমরা কতটা কষ্টে আছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ঘরবাড়িতে কোমর পানি; তাই বাঁধের ওপর ছাপরা ঘর তুলে আছি। রাত জেগে ভাবি কাল সকালে কী খাবো। দিন যায় রাত আসে, তবুও কষ্ট শেষ হয় না।

তিনি বলেন, সরকারি সাহায্যের জন্য গেলে মেম্বাররা বলেন, ‘তুমি আমার ভোটার না।’ এভাবেই দিন যাচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা কান্না করে নতুন কাপড়ের জন্য, কোথায় পাবো? সংসার চলে না। ঈদে আনন্দ আসবে কীভাবে?

Eid-Item-Gaibandha

মর্জিনা বেওয়া বলেন, আমাদের কোনো ঈদ নেই। আজ যেমন, ঈদের দিনটাও তেমন। জীবন বাচাঁনো এখন আমাদের জন্য কষ্টকর। আমাদের আবার কিসের ঈদ, ঈদ তো ধনীদের। ঘরে হাঁটু পানি। পরপর তিনবার বন্যা হলো। বন্যার পানি কমে, আবার বাড়ে। বন্যার কবলে জীবন শেষ।

বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষদের নাম ত্রাণ বিতরণের তালিকায় না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পরিমল চন্দ্র বলেন, বাঁধে আশ্রয় নেয়া সবাইকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কথা বলছি। বাঁধসহ বন্যাকবলিতদের মাঝে আরও ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।

সাঘাটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিঠুন কুণ্ড জানান, বন্যায় সাঘাটা উপজেলায় ১২৩ মেট্রিক টন চাল ও ৮৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড় ঈদ উপলক্ষে ১৫১ মেট্রিক টন চাল সাঘাটার ১০টি ইউনিয়নে বিতরণ অব্যাহত আছে।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন জানান, গত কয়েক দিনে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউপি মাঠ, কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ, হাজির হাট, দেলুয়ারবাড়ী চর, হাটবাড়ী চর, গণকবর এলাকা, চিনিরপটল, হলদিয়া মাদরাসা আশ্রয় কেন্দ্র, গার্লস স্কুল, কানাইপাড়া ও জুমারবাড়ী আশ্রয় কেন্দ্রসহ মোট ১১টি স্পটে বানভাসি মানুষদের মাঝে ত্রাণ, শুকনো খাবার ও হাইজিন কিটস বিতরণ করা হয়েছে। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বন্যাকবলিতদের ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, বুধবার (২৯ জুলাই) ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে করতোয়া ও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।